Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

স্মৃতি বলতে শুধু ভোটার তালিকায় বাবার ছবি

এলোমেলো চুল। চোখের নীচে কালো দাগ। প্রশাসনের আধিকারিকরা ত্রাণ শিবিরে এলেই মায়া শর্মা জানতে চাইছেন, ‘‘বাবাকে পেলেন?’’ চার দিন কেটে গিয়েছে। বাবার খোঁজ মেলেনি। ধস সরিয়ে উদ্ধার হয়েছে পরিবারের ৭ জনের নিথর দেহ।

ত্রাণশিবিরে নিখোঁজ রামলাল শর্মার পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ত্রাণশিবিরে নিখোঁজ রামলাল শর্মার পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

রেজা প্রধান
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০২:১৮
Share: Save:

এলোমেলো চুল। চোখের নীচে কালো দাগ। প্রশাসনের আধিকারিকরা ত্রাণ শিবিরে এলেই মায়া শর্মা জানতে চাইছেন, ‘‘বাবাকে পেলেন?’’

চার দিন কেটে গিয়েছে। বাবার খোঁজ মেলেনি। ধস সরিয়ে উদ্ধার হয়েছে পরিবারের ৭ জনের নিথর দেহ। পরিবারের আরও চার জন নিঁখোজ। প্রতি দিনই নতুন করে দেহ উদ্ধারের খবর পৌঁছছে মিরিকের টিংলিঙের ত্রাণ শিবিরে। মধ্য ত্রিশের মায়ার বাড়িটি ধসে যেন মুছে গিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ছবি সমেত অ্যালবামও ধসে হারিয়ে গিয়েছে। রবিবার সকালে গ্রামেরই এক বাসিন্দার কাছে বাবার ছবি দেখে চমকে উঠেছিলেন মায়া।

টিংলিঙের লিম্বুগ্রামের বাসিন্দা মায়া বিয়ের পরে মিরিকে থাকেন। বুধবার সকালে খবর পান, ধসে তাঁদের গোটা বাড়িটিই খাদে পড়ে গিয়েছে। বাবা-মা-ভাই-ভাইঝি কারও খোঁজ নেই। খবর পেয়েই টিংলিঙে চলে এসেছেন মায়া। বাড়ির কোনও চিহ্ন নেই, তাই টিংলিং প্রাথমিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরেই রয়েছেন তিনি। মা-ভাই সহ একেক করে সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু বাবার কোনও খোঁজ মেলেনি। হন্যে হয়ে ঘুরছেন মায়া।

রবিবার সকালে হঠাৎই নাটকীয় ভাবে ত্রাণ শিবিরে বাবার একটি ছবি পেয়েছেন তিনি। এক ব্যক্তি এসে মায়াকে খুঁজে হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন ভোটার তালিকার কয়েকটি পৃষ্ঠার প্রতিলিপি। যাতে মায়া-র বাবার ছবি রয়েছে। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি মশালর দোকান থেকে তিনি তালিকাটি পেয়েছেন। মায়া-র পরিবারের সদস্যদের নাম দেখে ত্রাণ শিবিরে এসে ফেরত দিয়েছেন। ভোটার তালিকায় বাবার ছবি দেখে কেঁদে ফেলেন মায়া। কিছুটা সামলে বলেন, ‘‘বাবার একটা ছবিও ছিল না। যাই হোক একটা ছবি তো পেলাম।’’

ভোটার তালিকার ওই পৃষ্ঠাতেই মায়াদেবীর বাবা রামলাল-সহ মা, ভাইদের ছবি রয়েছে। বাবা ছাড়াও মায়াদেবীর ভাইয়ের স্ত্রী কুমারী শর্মা, ১৬ বছরের ভাস্তা দ্বীপরাজ এবং ভাইঝি শ্রেয়ার কোনও খোঁজ মেলেনি। মায়াদেবীর কথায়, ‘‘সাত দিন আগেই বাড়ি থেকে ঘুরে গিয়েছি। আমি বাড়ি গেলেই বাবা তাঁর কাছে ডেকে বসাতেন। খুঁটিনাটি সব গল্প করতেন। আমি যখন খেতাম, পাশে বসে থাকতেন। বাবার মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।’’ একটি থেমে বললেন, ‘‘জানেন আমার ভাইপো দ্বীপরাজ ভাল ফুটবল খেলত, শ্রেয়া নাচের ক্লাসে যেত। মেয়েটা একদণ্ড স্থির থাকতে পারত না। কথা বলার সময়ে নাচের ভঙ্গি করত। ওদের কথা বারেবারেই চোখে ভেসে উঠছে।’’

কার্শিয়াঙের মহকুমা শাসক ইউ স্বরুপ বলেন, ‘‘নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের উৎকণ্ঠার কথা জানি। খোঁজ চলছে।’’ সেই খোঁজ কবে মিলবে, তার কোনও উত্তর কারও কাছে নেই। পরিবারের ১১ জনকে হারিয়েছেন মায়া। স্মৃতি বলতে আপাতত ভোটার তালিকার কয়েকটি পৃষ্ঠা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE