ব্রেবোর্ন রোডে বাজি বিক্রেতারা। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
কী চাই? কালীপটকা, দোদোমা না চকলেট বোমা? ফোন নম্বর দিয়ে যান। আমরা যোগাযোগ করে নেব। মনের মতো শব্দবাজি পৌঁছে যাবে বাড়িতেই!
বাজারে শব্দবাজি নিষিদ্ধ। তাই হোম ডেলিভারির এমনই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে দীপাবলির শহরে।
বুধবার দুপুরে হাওড়া ব্রিজ থেকে নামতেই দেখা গেল, ব্রেবোর্ন রোডের এক পাশে পসরা সাজিয়ে সার দিয়ে বসেছেন বাজি বিক্রেতারা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নুঙ্গি, চম্পাহাটি বা হাওড়ার বাগনান থেকে ওঁরা ফি বছরই বড়বাজারে বাজি নিয়ে আসেন। দুপুর থেকেই সেখানে জমেছে ক্রেতাদের ভিড়। রকেট, ফুলঝুরি, সেল থেকে শুরু করে তারাবাতি, রংমশাল— সব নিয়ে সেজেছে পসরা। আর কালীপটকা? শুনেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন মহিলা বিক্রেতা। বললেন, ‘‘প্লিজ দাদা, ওর নাম মুখে উচ্চারণ করবেন না। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। এখান থেকে দয়া করে চলে যান।’’
আরও পড়ুন: গুরুঙ্গকে ধরা দিতে নির্দেশ
ঠিক তখনই ভেসে এল মশিহার বার্তা। পাশের যুবক কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলেন, ‘‘ফোন নম্বরটা দিয়ে যান। মনের মতো শব্দবাজি পৌঁছে যাবে বাড়িতে।’’ চোখের সামনে সাজানো আতসবাজি থেকে নজর ঘুরল পাশে দাঁড়ানো ছাইরঙা জিনস্, টি-শার্টের যুবকের দিকে। জানা গেল, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নুঙ্গির বাসিন্দা বছর পঁচিশ বছরের ওই যুবক প্রতি বছরই বড়বাজারে বাজি বিক্রি করতে আসেন। কথা এগোতেই কিছুটা পাশে সরিয়ে নিয়ে কানে কানে বললেন, ‘‘কালীপটকা, দোদোমা, চকলেট বোমা—যা চাইবেন পৌঁছে যাবে। শুধু ফোন নম্বরটা দিন। এখানে এ সব কথা মুখে উচ্চারণ করবেন না।’’
সব দোকানেই এই ব্যবস্থা। আরও এক বিক্রেতার কাছে গিয়ে কালীপটকার নাম উচ্চারণ করতেই জুটল বকুনি। পরক্ষণে ক্রেতাকে ডেকে তাঁর সঙ্গী বললেন, ‘‘মিলবে। তবে দাম একটু বেশি লাগবে। বুঝতেই পারছেন, এ সব নিষিদ্ধ। ফোন নম্বর দিয়ে যান। সন্ধ্যার মধ্যেই যোগাযোগ করব।’’
নিয়মমতো বাজি বিক্রি করতে হয় শহরের তালিকাভুক্ত বাজিবাজার থেকে। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের যত্রতত্র যে ভাবে বাজি বেচাকেনা চলছে, তা নিয়ে
সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। বড়বাজারের ব্রেবোর্ন রোডে রাস্তা দখল করে এ ভাবে বাজি বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বড়বাজারে আতসবাজির নামে অনেক বাজি বিক্রি হয় যেগুলির শব্দ মাত্রা নব্বই ডেসিবেলের বেশি। ফাটার সময়ে অনেকটা দোদোমার মতোই আচরণ করে। এই সব বাজির বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ একই মত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ব্রেবোর্ন রোডে যে সব সেল বিক্রি হচ্ছে, সেগুলি ভাল করে পরীক্ষা করা দরকার।’’ আইনের ফাঁক গলে যে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি চলছে, তা স্বীকার করে নিয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘কেবল আইন করে পুলিশ একা নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি ঠেকাতে পারে না। ক্রেতা ও বিক্রেতাকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। পুলিশ খবর পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি বা কেনার আগে ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়েরই একটু ভাবা দরকার কী করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy