Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Specially Abled

কোমর থেকে অসাড় দেহ, মায়ের কোলে চেপে মাধ্যমিক দিয়ে স্কুলে প্রথম পায়েল হতে চায় আধিকারিক

বাবা দিগেন পাল পেশায় দর্জি। তার উপরই পরিবারের ভার। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত পরিবার। এখন মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাবেন কীভাবে, সেই ভেবে রাতের ঘুম ছুটেছে তাঁদের।

মায়ের কোলে চেপেই পরীক্ষা দিতে যায় পায়েল।

মায়ের কোলে চেপেই পরীক্ষা দিতে যায় পায়েল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:২৯
Share: Save:

স্বপ্ন একটাই, সরকারি আধিকারিক হয়ে পরিবার ও সমাজের পাশে দাঁড়ানো। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর সেই স্বপ্নের দিকেই আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছে পায়েল পাল। কিন্তু তার স্বপ্নের পথে অন্তরায়ও নেহাত কম নেই। মায়ের কোলে চেপেই এ দিক ও দিক যেতে হয় পায়েলকে। কারণ কোমরের নীচ থেকে অসাড় বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা এই মেয়ের।

স্কুল বা পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া, এমনকি দৈনন্দিন কাজের জন্যও মায়ের উপরই নির্ভর করতে বাধ্য হয় পায়েল। সেই মেয়ের মনের জোরের কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী পায়েল মায়ের কোলে চেপেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। ফল প্রকাশের পর তাক লেগেছিল সকলের। সে পেয়েছিল ৮০ শতাংশ নম্বর।

পায়েলের সাফল্যে আনন্দিত হলেও, আগামী দিনে তাকে কীভাবে পড়াবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা-মা। বাবা দিগেন পাল পেশায় দর্জি। তার উপরই পরিবারের ভার। পায়েলের আরও এক ভাই রয়েছে। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত পরিবার। এখন মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাবেন কীভাবে, সেই ভেবে রাতের ঘুম ছুটেছে তাঁদের।

জন্ম থেকেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছে পায়েল। মাধ্যমিক পাশ করলেও এখনও তার উচ্চতা ছোট্ট শিশুর মতোই। কোমরের নীচ থেকে কার্যত অসাড়। দৈনন্দিন কাজে মায়ের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। হাঁটাচলা তো দূর, সরু ও রুগ্ন হাত দিয়ে ভারী কাজ করতে পারে না। কোনও রকমে লেখে সে। আর তাতেই বাজিমাত। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কুরমাইল সোনাউল্লা হাই স্কুলে পড়ে সে। অস্টম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়েছিল। তা ছাড়া প্রতি ক্লাসেই প্রথম হয়েছে পায়েল।

২০২২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও অন্যথা হয়নি। স্কুলের ৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল মাত্র ৩৬ জন। তাদের মধ্যে পায়েলই প্রথম। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৪। অঙ্কে ৮০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ভূগোলে ৯৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। বর্তমানে নিজের স্কুলেই কলা বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা চালাচ্ছে পায়েল।

আগামী দিনে পড়াশোনা করে চাকরি করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চায় পায়েল। বলে, ‘‘আমি আগামী দিনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পর সরকারি আধিকারিক হয়ে সমাজের কাজ করতে চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Specially Abled Student school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE