বিপাশা মণ্ডল
ভারতের নাগরিক, অথচ বাস কাঁটাতারের ও পারে। সীমান্তে বিএসএফের চোখারাঙানি তো আছেই, সেই সঙ্গে ঘরে জমাট বাঁধা দারিদ্র। পড়ার খরচটা যাতে ওঠে, সে জন্য গ্রামের ঝুমুর নাচের দলের সঙ্গে বেরিয়ে পড়া। যা আয় হয়, তা-ই দিয়ে খাতা-বই, পেন কেনা, টিউশনের খরচ জোগানো। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেই মেয়ে পেয়েছে ৩৭৮ নম্বর। তার এমন সাফল্যে পরিবারের লোকজন তো বটেই, খুশি পড়শিরাও।
জনজাতি সম্প্রদায়ের মেয়ে বিপাশা মণ্ডল থাকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা কাঁটাতারের ও পারে গ্রাম চর মেঘনায়। হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের কলা বিভাগের ছাত্রী বিপাশা বাংলায় ৮০, ইংরেজিতে ৬০, সংস্কৃতে ৮০, ইতিহাসে ৮০ ও দর্শনে ৭৮ পেয়েছে। গ্রামে সেই প্রথম যে ‘স্টার’ নম্বর পেল। তবে ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত তার বাবা-মা।
পরিবারের লোকজন জানান, কাছাকাছি কলেজ বলতে ২৫ কিলোমিটার দূরে করিমপুর পান্নদেবী কলেজ। পড়ার খরচ তো আছেই, সঙ্গে যাতায়াত। বিপাশার বাবা বুদ্ধদেব মণ্ডল বলেন, “বিঘা দুয়েক জমি ইজারা নিয়ে চাষ করি। বাকি সময় দিনমজুরি। তিন ছেলেয়েকে নিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। মেয়ে পড়াশোনার খরচ জোগাতে ঝুমুর নাচত। এখন ভর্তি, পড়াশোনা, বইপত্রের খরচ কী ভাবে জোগাড় হবে সেটাই চিন্তার।”
বিপাশা জানায়, আট কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেত সাইকেল চালিয়ে। পরীক্ষার আসন পড়েছিল প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে যমশেরপুর স্কুলে। সেখানেও গিয়েছে সাইকেল চালিয়ে। বাড়ি থেকে বার হত সকাল ৮টা নাগাদ। পরীক্ষা শেষ হলে তড়িঘড়ি করে ফের সাইকেল চালানো। সন্ধ্যায় সীমান্তে ‘গেট’ বন্ধ হয়ে গেলে আর গ্রামে যাওয়া যাবে না।
অভাবের সংসারে বিপাশাই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। সে জানায়, তার স্বপ্ন এক জন শিক্ষিকা হওয়া। প্রতিবেশী শুভেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘সীমান্তের এই গ্রামে পড়াশোনা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়। কোনও সুবিধা নেই। এ বছর বিপাশাই একমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসেছিল এবং সফল হয়েছে। ওর সাফল্যে সবাই খুশি।’’
বিপাশা বলে, ‘‘অভাব আছে ঠিকই, তবে এটা চাকরি আমি জোটাবই। তার পর পরিবারকে কাঁটাতারের ও পারে নিয়ে যাব। তখন ‘সত্যিকারের’ ভারতের নাগরিক হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy