কপিলমুনির মন্দিরের সামনে সাগরতটে শুক্রবার সন্ধ্যায় চলছে আরতি, উপস্থিত ছিলেন হাজার পাঁচেক পুণ্যার্থী। ছবি: সমরেশ মণ্ডল
আদালতের নির্দেশ, প্রশাসনের তৎপরতা, নজরদার কমিটির উপস্থিতি— কোনও কিছুই রাশ টানতে পারল না সংক্রান্তিতে সাগরে নেমে পুণ্যস্নানের।
শুক্রবার সূর্য ওঠার আগে থেকেই গঙ্গাসাগরে ছিল থিক থিকে ভিড়। জলে নামার অনুমতি না থাকায় এতদিন তবু সাগরতটে ব্যারিকেড করার চেষ্টা চালিয়েছে প্রশাসন। তাতে বিশেষ কাজ হয়েছে বলে দাবি করছেন না কেউ। তবে এদিন সব আগল ভেঙে জলে নেমে পড়েন পুণ্যার্থীরা। ভিড়ের মধ্যে কেউ দূরত্ববিধি নিয়ে মাথা ঘামাননি। জলে নেমে কারও মাস্ক ছিল না। মাইকে পুলিশ-প্রশাসন লাগাতার ঘোষণা করে গিয়েছে কোভিড বিধি মানার ব্যাপারে। তবে সে সব কারও কানে গিয়েছে বলে মনে হল না।
উত্তরপ্রদেশ থেকে সপরিবার সাগরে এসেছেন হরিরাম দুবে। দেশওয়ালি ভাষায় বললেন, ‘‘গঙ্গা মাইয়াকে প্রণাম জানাতে এত দূর থেকে আসা। কোভিড হলে বাঁচালে তো তিনিই বাঁচাবেন। তাই ভক্তিভরে স্নান সারাটা সব থেকে জরুরি।’’ ভিড়ের সিংহভাগের যখন এমনটাই যুক্তি, তখন কোন বিধি-নিষেধের আর তোয়াক্কা করবেন তাঁরা! ই-স্নান, ই-দর্শন, ড্রোনের মাধ্যমে জল ছিটিয়ে স্নানের ব্যবস্থা থাকলেও সে সবে তৃপ্ত হয়নি অধিকাংশ পুণ্যার্থীর মন।
করোনা পরিস্থিতিতে সাগর মেলার আয়োজন ঘিরে বিতর্ক চলেছে কয়েকদিন ধরে। বিষয়টি হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আদালত বিধি মানার কড়া শর্ত চাপিয়ে মেলার অনুমতি দেয়। নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের কমিটি গড়ে দেয়। কমিটির সদস্যেরা মেলায় এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। সূত্রের খবর, ব্যবস্থাপনায় কিছু ক্ষেত্রে খুশি হতে পারেননি তাঁরা। তবে তাতে পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি। আটকানো যায়নি সংক্রান্তিতে লক্ষ মানুষের স্নান।
এ দিন সকালেও সমদ্রতট ঘুরে দেখেন কমিটির সদস্যেরা। পরে পরিদর্শনে আসেন জেলাশাসক। সন্ধ্যায় গঙ্গাআরতিকে কেন্দ্র করেও কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে সাগর পাড়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রীরাও।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বার তিরিশ লক্ষ মানুষ মেলায় আসবেন বলে অনুমান করা হয়েছিল। তবে সেই পরিমাণ মানুষ আসেননি। ভিন্ রাজ্য থেকে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ আসেন সাগরে, এ বার সেই সংখ্যাটা কম ছিল বলে জানাচ্ছে প্রশাসনের একটি সূত্র। তার উপরে গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খারাপ ছিল। বৃষ্টি হয়েছে। অনেকে দ্রুত মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
প্রশাসনের দাবি, করোনা ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ়ের শংসাপত্র বা আরটিপিসিআর টেস্টের রিপোর্ট না থাকলে কাউকে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথান বলেন, “আদালতের সমস্ত নির্দেশ আমরা মেনে চলার চেষ্টা করেছি।”
৭ জানুয়ারি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ১০ লক্ষ মাস্ক বিতরণ হয়েছে মেলায়। র্যাষপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে ৯৭,৩৪৫ জনের। আরটিপিসিআর হয়েছে ১০,২২৫ জনের। এর মধ্যে বাবুঘাট ও সাগর মিলিয়ে ১৭১ জন পজ়িটিভ পাওয়া গিয়েছে। এদিন মেলা অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে এই তথ্য দেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেখানে ছিলেন মন্ত্রী পুলক রায়, বঙ্কিম হাজরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy