গঙ্গাসাগর পরিদর্শনে হাই কোর্টের নজরদার কমিটির দুই সদস্য। ছবি: সমরেশ মণ্ডল
ভোরের আলো ফোটার আগে থেকেই সমুদ্রে নেমে পড়লেন পুণ্যার্থীরা।
লট-৮ ঘাট, কচুবেড়িয়ায় কাতারে কাতারে মানুষ ভেসেল পেরোলেন ভিড় ঠেলে।
জায়গায় জায়গায় দু’-চার জনের কোভিড টিকাকরণের শংসাপত্র খতিয়ে দেখলেন প্রশাসনের লোকজন। পাশ কাটিয়ে হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে গেল ভিড়। তাঁদের শংসাপত্র কে কতটা দেখল— প্রশ্ন থেকেই গেল। বৃহস্পতিবার দিনভর বিধিভঙ্গের এমন নানা ছবি উঠে এল পুণ্যতীর্থ গঙ্গাসাগরে। আদালত নিযুক্ত কমিটির সদস্যেরা বার তিনেক সাগরতট পরিদর্শন করেছেন। পুণ্যস্নানের দৃশ্য তাঁদেরও নজর এড়ায়নি।
এ বার ড্রোনের মাধ্যমে উপর থেকে জল ছিটিয়ে স্নানের ব্যবস্থা চালু হয়েছে সাগর মেলায়। তবে সরাসরি জলে নেমে পুণ্য সংগ্রহেই আগ্রহ বেশি ছিল বেশি মানুষের। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা হরি যাদব বলেন, ‘‘এই পুণ্যস্নানের জন্যই তো আসা। উপর থেকে ছেটানো জলে কি মন ভরে!’’ সমুদ্রে নেমে স্নান আটকাতে ব্যারিকেড দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু সে সব এ দিন চোখে পড়েনি। মেলার জায়গায় জায়গায় জমায়েত হয়েছে। গায়ে গা লাগিয়ে মন্দিরে ঢুকেছেন বহু মানুষ। অনেককে মাস্ক ছাড়াই ঘুরতে দেখা গেল।
তবে মন্দির চত্বরে মাঝে মধ্যে স্যানিটাইজ়ার ছড়াতে দেখা গিয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে মাইকে সচেতনতার বার্তা বেজেছে দিনভর। মন্দিরের তরফেও মাইকে পুণ্যার্থীদের সতর্ক করেছেন পুরোহিত। তবে সে সব কথা লোকের কানে কতটা গিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।
মেলায় এ দিন পৌঁছেছেন বিহারের বাসিন্দা সুরেশ যাদব, ললিতা যাদব। সুরেশ বলেন, “আমরা ভ্যাকসিনের একটা ডোজ় নিয়েছি। এখনও দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া হয়নি। বাড়ি ফিরে নেব।” তবে মেলায় আসার পথে কোথাও কেউ সে কথা জানতে চাননি বলে জানালেন সুরেশ-ললিতারা। আর মেলায় আসা সাধুসন্তদের একাংশ খোলামেলাই জানাচ্ছেন, উপরওয়ালার প্রতি তাঁদের বিশ্বাস অগাধ। টিকা নেওয়ার কোনও দরকারই মনে করছেন না তাঁরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন এ দিন বলেন, “আদালতের সমস্ত নির্দেশ মেনেই আমরা মেলা পরিচালনা করছি। পুণ্যার্থীরা যাতে সমুদ্রে নেমে স্নান না করেন, সে কারণে ই-স্নান, ড্রোনের মাধ্যমে স্নানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তবে এত কিছুর পরেও ভিড় যে হচ্ছে, তা মেনে নেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, “এক-একটি দলে একশো-দেড়শো বা তারও বেশি পুণ্যার্থী দূরদূরান্ত থেকে আসছেন। তাঁদের আলাদা করা যাচ্ছে না।”
এ দিন মেলায় এসেছেন বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, “প্রচুর মানুষ মেলায় আসছেন। সে কারণে কিছু বিষয় আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে। তবে চেষ্টা করছি, সম্পূর্ণ নির্দেশিকা মেনেই মেলা পরিচালনা করার।” রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার কথায়, “আমরা কঠোর ভাবে নিয়ম পালনের চেষ্টা করছি। তবে মানুষকেও নিজেদের সুরক্ষার জন্য একটু সতর্ক হতে হবে।”
এ দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ লক্ষ ২ হাজার মানুষ সাগরমেলায় এসেছেন। এঁদের প্রত্যেককে আলাদা করে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষাও হয়েছে। ১৩ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের সেফ হোমে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনেই এ বার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাবুঘাট থেকে কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাট পর্যন্ত ১৩টি পয়েন্টে করোনা-স্ক্রিনিং চলে। এ বার ভার্চুয়াল মাধ্যমের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।’’ মন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত ই-দর্শন করেছেন ৯৯.৬ লক্ষ মানুষ। ই-স্নান করেছেন ১ লক্ষ ৭ হাজার ৪২০ জন। এখনও পর্যন্ত ই-পুজো দিয়েছেন ২১,৫৬১ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy