Advertisement
২৯ জানুয়ারি ২০২৫
Deblina Hembram

দ্বন্দ্বের গেরোয় ‘ইতিহাস’ তৈরি হয়েছে সিপিএমে, দুই নেতার কোন্দল মেটাতে ‘তৃতীয় বিকল্প’ দেবলীনা

গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছিল সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্মেলন। জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে থাকা দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিল।

Deblena Hembram became the secretary of Bankura district CPM as the third alternative to resolve the conflict between the two leaders

দুই নেতার ‘দ্বন্দ্ব’ মেটাতে ‘তৃতীয় বিকল্প’ হিসাবে দেবলীনা হেমব্রমকে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে সিপিএম। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০০
Share: Save:

দেশে প্রথম আদিবাসী মহিলা জেলা সম্পাদক করেছে সিপিএম। বাঁকুড়ার জেলা সম্পাদক করা হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রমকে। ঘটনাচক্রে, দেবলীনাকে সম্পাদক করায় ‘ইতিহাস’ তৈরি হয়েছে সিপিএম তথা দেশের বাম আন্দোলনে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, সেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে দ্বন্দ্বের গেরোয়। বাঁকুড়ার দুই নেতার ‘দ্বন্দ্ব’ মেটাতে ‘তৃতীয় বিকল্প’ হিসাবে দেবলীনাকে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ইতিহাস তৈরি হলেও তার মধ্যে দ্বন্দ্বের ছায়া রয়েই গিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছিল সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্মেলন। জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে থাকা দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিল। প্রথম জন যুব সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অভয় মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় জন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদার। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে তৃতীয় নাম হিসাবে দেবলীনার উপর জোর দেন মহম্মদ সেলিম, অমিয় পাত্রদের মতো রাজ্য স্তরের নেতারা। তার পরেই দেবলীনার নাম জেলা সম্পাদক পদে চূড়ান্ত হয়।

জেলা সম্পাদক নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়নি ঠিকই, কিন্তু সবটা মসৃণ ভাবেও হয়নি। সিপিএম সূত্রের খবর, জেলা কমিটির প্রথম বৈঠকে অভয়ের নাম সম্পাদক হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি নাম প্রত্যাহার করে নেন। তার পরে দেবলীনার নাম আসে ‘তৃতীয় বিকল্প’ হিসাবে। ফলে ইতিহাস তৈরি হয়েছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে সিপিএমের তরফে, তা খুব ‘সাবলীল’ বা ‘স্বচ্ছন্দ’ ভাবে হয়নি।

১৯৯৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রানিবাঁধের বিধায়ক ছিলেন দেবলীনা। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারে তিনি ছিলেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ উন্নয়নমন্ত্রী। ২০২২ সালে কেরলের কুন্নুরে সিপিএমের শেষ পার্টি কংগ্রেস হয়। সেখানে দেবলীনাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয় তাঁকে। সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্র, রাজ্য এবং জেলা স্তরে তিনটি দায়িত্বে একসঙ্গে কোনও এক জন থাকতে পারেন না। বাঁকুড়ার দায়িত্ব গ্রহণে দেবলীনার ক্ষেত্রে সেই নিয়মেরও ‘ব্যতিক্রম’ হয়েছে। অতীতে গৌতম দেব, শমীক লাহিড়ী, নদিয়ার সুমিত দে’র ক্ষেত্রে যেমন পলিটব্যুরোর বিশেষ অনুমোদন লেগেছিল, দেবলীনার ক্ষেত্রেও তা প্রয়োজন। তবে জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর নাম দেশের বাম আন্দোলনের ইতিহাসে লেখা হলেও তাতে থেকে গিয়েছে দলীয় দ্বন্দ্বের ছায়া।

সিপিএমের ইতিহাসে ‘তৃতীয় বিকল্প’ সম্পাদক নির্বাচন অবশ্য নতুন নয়। অতীতে গঙ্গার দু’পারের দুই জেলা হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর প্রথম জেলা সম্মেলনেই হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ‘তৃতীয় বিকল্প’ প্রয়োগ করেছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। উত্তর ২৪ পরগনায় নেপালদব ভট্টাচার্য, তড়িৎ তোপদার-সহ একাধিক নেতার ‘কোন্দল’ রুখতে পলিটব্যুরোর বিশেষ অনুমতিক্রমে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতমকে জেলা সম্পাদক করেছিল সিপিএম। আবার হুগলি সিপিএম দেখেছিল অধুনাপ্রয়াত দুই নেতা অনিল বসু এবং সুনীল সরকারের ‘সংঘাত’। রিষড়ায় অনুষ্ঠিত সিপিএমের জেলা সম্মলনে সম্পাদকের দৌড়ে অনিল এবং সুনীল দ্বৈরথ হয়েছিল। ভোটাভুটির পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন সুনীল। তার পরে তিনিই প্রস্তাব করেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীর নাম। সেই কৌশলের কাছে রণে ভঙ্গ দিতে হয়েছিল অনিলকে। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক মাসের ব্যবধানে অন্য একটি অভিযোগে অনিলকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল সিপিএম।

অন্য বিষয়গুলি:

Deblina Hembram CPM Leader district secretary Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy