কারোর মুখে নেই মাস্ক। ফাইল চিত্র।
অতিমারি পরিস্থিতিতে হাজারো বিধি আছে। অন্ত নেই নিয়মেরও। কিন্তু আমজনতার চোখে ধরা পড়া বাস্তব চিত্রের সঙ্গে নিয়ম-বিধির দূরত্ব কয়েক যোজনের! নিয়ম মতে চলার বদলে বিধিভাঙার খেলাই যেন চলছে নিরন্তর। তা হলে প্রশ্ন ওঠে, নিয়ম তৈরি হয় কি শুধু নিয়ম রক্ষার জন্যই? না কি নিয়ম কার্যকর করার দায়ও থাকে পুলিশ-প্রশাসনের?
জনতার অবশ্য আক্ষেপ, এ সব নিয়ে কোর্টও যেন তেমন কড়া হতে পারছে না। কোর্ট নির্দেশ দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু তা অক্ষরে-অক্ষরে পালন না-হলে প্রশাসনিক কর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করছে কি? তবে আইনজীবীদের বক্তব্য, আইনের পরিসরে থেকে কোর্ট বহু ক্ষেত্রেই কড়া কথা শুনিয়েছে প্রশাসনকে। নিয়মের বেড়াজালেও বেঁধেছে। তবে সব ক্ষেত্রে কোর্ট নিজে থেকেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
এ রাজ্যে অবশ্য প্রশাসনের নিয়মের বেড়া কতটা শক্ত, তা নিয়ে আমজনতার ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। অতিমারি প্রকোপিত রাজ্যের ছবিই সেই সন্দেহকে শক্তি জোগাচ্ছে। কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে কন্টেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ এলাকা চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। কিন্তু আদৌ কি সেই নিয়ম মানা হয়? সংক্রমণের প্রথম দুই ঢেউয়েও গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর যে ছবি ধরা পড়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতেও তাই দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে কলকাতায় ৪৪টি গণ্ডিবদ্ধ এলাকা রয়েছে। তাতে শনিবার কোথাও জটলা দেখা গিয়েছে। ফুলবাগানের এমন একটি এলাকায় তো গার্ডরেলই চোখে পড়েনি। ট্যাংরায় আবার গার্ডরেল থাকলেও তা সরিয়েই অবাধে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। শুধু ট্যাংরা নয়, যাদবপুর-সহ অন্যান্য এলাকাতেও বাধা সরিয়ে যাতায়াত করেছেন গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা।
নিয়ম ভাঙার এই নিরন্তর খেলার উদাহরণ অবশ্য শুধু গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় আবদ্ধ নেই। বরং ভোট হোক বা সাগরমেলা, সর্বত্রই তার ছাপ স্পষ্ট। এ সব ক্ষেত্রে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা, পুলিশ-প্রশাসন যেন বুড়ি ছোঁয়া নিয়ম রক্ষাতেই ব্যস্ত। সাগরমেলায় হাই কোর্ট টিকার দুটি ডোজ় এবং কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে তবেই সাগরদ্বীপে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, সেই নির্দেশ পালনও করা হয়েছে। কিন্তু মেলার মাঠে কিংবা স্নানের সময় ঠেলাঠেলি ভিড়, মাস্কহীন জনতার ঢল সবই লক্ষ্য করা গিয়েছে। যা দেখে প্রশাসনের একাংশই বলছে, কোর্ট যা বলেছিল তা হয়তো করা হয়েছে। কিন্তু অতিমারির যে চিরাচরিত বিধি তা শিকেয় উঠেছে।
আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, অতিমারির সাবেক বিধি পালনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নির্দেশ কার্যকর করতে বলেছিল কোর্ট। কিন্তু বাস্তবে হল, চিরাচরিত বিধি শিকেয় তুলে শুধু কোর্টের নির্দেশটুকুই পালন করা হল! ঠিক যেমন ভাবে ভোটের মনোনয়নে বা প্রচারে অনধিক পাঁচ জনের নিয়ম পালিত হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের ঘরে প্রার্থী পাঁচ জন সঙ্গীকে নিয়েই ঢুকছেন। কিন্তু রাস্তায় জটলা করেছেন তাঁর শ’য়ে-শ’য়ে সমর্থক! একই ভাবে প্রচারে ভোটারের দোরগোড়ায় হয়তো পাঁচ জন যাচ্ছেন। কিন্তু ভোটারের বাড়ির বাইরে জটলা থাকছেই।
রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “নিয়ম যতই হোক না-কেন, তার ফাঁক থাকবেই। নিয়ম ভাঙার লোকেরা সেই ফাঁক গলে যায়।” তবে তিনি এ-ও মানছেন, নিয়ম অক্ষরে-অক্ষরে কার্যকর করতে গেলে জনসচেতনতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তার অভাব যে রয়েছে, তাও অস্বীকার করছেন না তিনি।
তা হলে প্রশ্ন ওঠে, নিয়ম জারি এবং তা ভাঙার এই খেলা কি চলতেই থাকবে? তা হলে নিয়মের প্রয়োজনীয়তাই বা কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy