করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই কপিলমুনির আশ্রম চত্বরে পুণ্যার্থীদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র
সকাল ৯টা। কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটে ভিড়ল ভেসেল। ‘আও মুন্না’ বলে বছর আটেকের ছেলের হাত শক্ত করে চেপে পড়িমড়ি করে ছুটলেন এক মহিলা। মুন্নার দুই ভাইবোন আর বোঁচকাবুঁচকি সামলে হুড়মুড়িয়ে এগোলেন মুন্নার বাবাও। নিমেষের মধ্যে শ’দুয়েক মানুষের ভিড় ঝাঁপিয়ে পড়ল ভেসেলের দিকে।
মঙ্গলবার ভেসেল ছাড়ার সময়ে আন্দাজ করা গেল, অন্তত দেড়শো মানুষ গাদাগাদি করে উঠেছেন। এ ওর গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে। ঘাটে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছিলেন প্রশাসনের এক কর্মী। জমায়েতটা ৫০ পেরিয়ে গেল না? প্রশ্ন করতে উত্তর মিলল, ‘‘ও সব নিয়ম সাগর মেলার মাঠের জন্য।"
সকাল ১০টায় কচুবেড়িয়া ঘাটে ভেসেল ভিড়তেই দেখা গেল ঠেলা-গুঁতোর নানা দৃশ্য। কাতারে কাতারে মানুষ বাস ধরার জন্য ছুটোছুটি করছেন। ৩৫-৪০ আসনের এক একটা বাস যখন ছাড়ছে, ততক্ষণে বাসের পেটে জায়গা খুঁজে নিয়েছেন অন্তত দ্বিগুণ লোক। তাদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ লোটাকম্বল।
ঘাট, বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণে কাউকে বিশেষ গা লাগাতে দেখা গেল না মঙ্গলবারও।
বেলা তখন ১২টা। কপিলমুনির মন্দিরে দেখা গেল শ’য়ে শ’য়ে পুণ্যার্থী ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন। গায়ে গা লাগিয়ে, গাদাগাদি করে পুজো দিচ্ছেন। কখন যে মাস্ক নেমে এসেছে থুতনির নীচে, সে খেয়াল নেই অনেকের। দেখা গেল, খোদ মন্দিরের পুরোহিতেরই মাস্ক নেই।
পঞ্চাশ জনের বেশি জমায়েত নিয়ে কী যেন একটা নিয়ম হয়েছে— প্রশ্ন শুনে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন মন্দির চত্বরে মোতায়েন কয়েকজন পুলিশকর্মী।
সমুদ্র স্নানে না নামার কথা প্রচার হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণে। তবে মাইকের সেই ঘোষণা লোকজনের কানে কতটা পৌঁছচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অনেককে দেখা গেল, সমুদ্রে নেমে স্নান সারছেন। কাপড় শুকোচ্ছেন হাওয়ায়।
সব মিলিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার, বড় বড় ফেস্টুন-ব্যানার টাঙিয়ে সচেতনতার বার্তা— কোনওটাই বিশেষ কাজে আসছে বলে দেখা গেল না সাগর মেলা প্রাঙ্গণ ও মেলায় আসার পথটুকুতে। সর্বত্রই ভিড় উপচে পড়ছে। মন্দিরে ঢোকার মুখে থার্মাল চেকিং হচ্ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দেখা গেল, ভিড়টা আর নিয়ন্ত্রণে নেই। সকলের থার্মাল চেকিং হচ্ছে না। এ দিক ও দিক গলে মন্দিরে ঢুকে পড়ছেন অনেকেই।
প্রশাসনের দাবি, এ বার নাকি অন্যবারের তুলনায় ভিড় কম। তাতেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে ভিড় বেশি হলে কী হত, তা সহজেই অনুমেয়। সংক্রান্তির এখনও ক’দিন বাকি। ভিড় আরও বাড়বে, সে কথাও জানাচ্ছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। ফলে বিধিনিষেধ, নজরদারির দফারফা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
মেলা প্রাঙ্গণে কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য সেই ব্যবস্থা কতটা কাজে আসবে, সে প্রশ্ন থাকছেই।
বিহার থেকে এসেছেন অমিত কেশরী। মঙ্গলবার কপিলমুনির মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বললেন, “শুনেছি করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু কোথায়, কী ভাবে হচ্ছে— তা জানি না। বাড়ি থেকে এত দূর চলে এলাম, পরীক্ষার কথা কেউ তো কোথাও বলল না।”
আর এক পুণ্যার্থী উমেশ গিরির কথায়, ‘‘সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। কিন্তু পুণ্যার্থীরা নিজেরা সচেতন না থাকলে নিয়ম ভাঙবেই।”
এর মধ্যেই সাগরের জল রাজ্যের সব জেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। এ দিন ‘পুণ্যতরী’ নামে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন জেলাশাসক পি উলাগানাথন। ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। জেলাশাসক বলেন, “পুণ্যতরীর মাধ্যমে গঙ্গাসাগর আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। আগামী দিনে সারা দেশে এ ভাবে সাগরের জল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।” এ দিন মেলায় উদ্বোধন হয় ধ্যানকেন্দ্রের। সেখানে ধর্মালোচনা চলবে মেলার দিনগুলিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy