Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জল বাড়ছে সুবর্ণরেখায়, জেলায় সতর্কতা

বর্ষার ভ্রূকুটি বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী জনপদগুলি বানভাসি হওয়ার আশঙ্কায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করল প্রশাসন। মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের গালুডি জলাধার থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে সুবর্ণরেখার জলস্তর বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে জেলা প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

বিপদসীমার খুব কাছেই বইছে সুবর্ণরেখার জল। —নিজস্ব চিত্র।

বিপদসীমার খুব কাছেই বইছে সুবর্ণরেখার জল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

বর্ষার ভ্রূকুটি বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী জনপদগুলি বানভাসি হওয়ার আশঙ্কায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করল প্রশাসন। মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের গালুডি জলাধার থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে সুবর্ণরেখার জলস্তর বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে জেলা প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
মঙ্গলবার সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর-১ ও নয়াগ্রাম ব্লকের নদী তীরবর্তী এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকে প্রচার করে এলাকাবাসীদের সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাতে সুবর্ণরেখার জল বিপদসীমার খুব কাছাকাছি বইছে। ব্লকগুলিতে কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ দিনই নয়াগ্রামের মলম এলাকায় সুবর্ণরেখার চরে গরু চরাতে গিয়ে মনোজ মাইতি (৩৫) নামে এক যুবক জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন। রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলে নি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এদিন দুপুরে বালিপাল গ্রামের বাসিন্দা মনোজবাবু এলাকার কয়েক জনের সঙ্গে নদীর চরে গরু চরাচ্ছিলেন। আচমকা নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় তিনি গরুর লেজ ধরে পাড়ে উঠতে যান। ওই সময় তাঁর ছাতাটি হাত ফস্কে নদীতে পড়ে যায়। ছাতা তুলতে গিয়ে পা হড়কে জলের প্রবল তোড়ে ভেসে যান তিনি।
সাঁকরাইল ব্লকের রগড়া, আঁধারি, রোহিনী ও লাউদহ এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নদী তীরবর্তী অঞ্চলের ২০টি গ্রাম বন্যাপ্রবণ এলাকা। আগে ভাবে বিপদের আঁচ করে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে একটি স্পিড বোট নিয়ে আসা হয়েছে সাঁকরাইলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীর জল বিপদসীমা প্রায় ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে। এর আগে পর পর কয়েক বছর সুবর্ণরেখা ও ডুলুংয়ের জল একসঙ্গে বেড়ে গিয়ে সাঁকরাইলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত সাঁকরাইলে ডুলুং নদীর জল নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের সাতমা, অমরদা, শাসড়া ও আলমপুর পঞ্চায়েতের ১৬টি গ্রাম বন্যা প্রবণ। ইতিমধ্যেই সাতমা পঞ্চায়েতের ডোমপাড়ায় জল ঢুকতে শুরু করেছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, বাসিন্দাদের স্থানীয় একটি হাইস্কুলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নয়াগ্রাম ব্লকের বড়খাঁকড়ি, মলম, নয়াগ্রাম ও জামিরাপাল পঞ্চায়েতের নদী তীরবর্তী ১৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, মলম অঞ্চলের শুকদেবপুর, যাদবপুর, নরসিংহপুর, আউসাপাল, বালিপাল, মলম গ্রামের নিচু এলাকাগুলিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে।

অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডের গালুডি ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ায় সুবর্ণরেখার জল বাড়তে শুরু করেছে। যদিও জল এখনও বিপদসীমার কাছে পৌঁছয়নি। আজ, বুধবার গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, কেশিয়াড়ি, দাঁতন ও মোহনপুরের নদী তীরবর্তী কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিও সেরে রেখেছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ভোর থেকে গালুডি ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। গোড়ায় ১লক্ষ ৬২হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়। সকালের দিকে তা বেড়ে ১ লক্ষ ৯৫হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। দুপুরে তা আরও বাড়িয়ে আড়াই লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়া হতে থাকে। বিকেলের পর অবশ্য জল ছাড়ার হার কমিয়ে ১লক্ষ ৮০হাজার কিউসেক করা হয়। এই জল মঙ্গলবার রাতে ঝাড়খণ্ডের সীমানা পেরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকে সুবর্ণরেখায় মিশবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE