হাসপাতালে চিকিত্সা চলছে এক আহত বনকর্মীর। —নিজস্ব চিত্র।
চোরাশিকারিদের পাকড়াও করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন রাজ্য বন দফতরের এক পদস্থ কর্তা-সহ ৮ বনকর্মী। রবিবার ভোর রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির মৈপিঠ এলাকায় চোরাশিকারী গ্যাংয়ের অন্যতম পান্ডাকে ধরতে গেলে তাঁরা আক্রান্ত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চার বনকর্মী চিকিৎসাধীন।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৮ এপ্রিল। ওই দিন সুন্দরবনের আজমলমাড়ির জঙ্গলে একটি পূর্ণবয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেহ দেখতে পান বনকর্মীরা। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, হরিণ ধরার জন্য চোরাশিকারকারীদেরপাতা ফাঁদে আটকেই মৃত্যু হয়েছে ওই বাঘটির।
বন দফতর সূত্রে খবর, ওই ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁরা ওই এলাকারই দু’জন চোরাশিকারীকে গ্রেফতার করেন। তাঁদের জেরা করতে উঠে আসে বড়সড় চোরাশিকার চক্রের হদিশ। ডিএফও সন্তোষা জিআর বলেন, “গোটা সুন্দরবন এলাকায় প্রায় পাঁচটি ছোট মাপের চোরাশিকার চক্র সক্রিয় ছিল। নিয়মিত ধরপাকড়ও চলত। কিন্তু আজমলমাড়ির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি, এর পিছনে রয়েছে অনেক শক্তিশালী একটি চক্র।” বন দফতর সূত্রে খবর, মৈপিঠের মধ্য গুরগুরিয়া গ্রামে ওই চক্রের একজন কিংপিনের হদিশ পান বনকর্মীরা। সন্তোষা বলেন,‘‘ওই ব্যক্তি ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দেয়। ওই কিংপিন মূলত বিভিন্ন চোরাশিকারীদের টাকা দিয়ে বরাত দেয়। তারপর তাদের কাছ থেকে হরিণ বা অন্য বন্য প্রাণীর মাংস এবং চামড়া কিনে নেয়।”
এক পদস্থ কর্তা-সহ ৮ বনকর্মী আহত হয়েছেন।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: ঘণ্টাকয়েকের মধ্যেই ফের বিস্ফোরণ শ্রীলঙ্কায়, আট বিস্ফোরণের বলি অন্তত ১৮৫, দেশজুড়ে কার্ফু
মধ্য গুরগুরিয়ায় ওই পান্ডার ডেরার হদিশ পাওয়ার পরই রবিবার ভোররাতে ডিএফও-র নেতৃত্বে আট বনকর্মী ওই গ্রামে পৌঁছন। সন্তোষা বলেন, ‘‘অভিযুক্তের বাড়ি পৌঁছনোর আগেই গ্রামের শ’খানেক লোক আমাদের ঘিরে ফেলে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল লাঠি। ছিল দা, কুড়ুলের মত ধারাল অস্ত্র।’’ বনকর্মীদের অভিযোগ, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই বনকর্মীদের উপর ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা করে গ্রামবাসীরা। কুড়ুলের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান সন্তোষা নিজে। তাঁর মাথায় আটটি সেলাই করতে হয়। অন্যদিকে গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি দুই ডেপুটি রেঞ্জার।
আরও পড়ুন: ‘চার্চে হতে পারে আত্মঘাতী হামলা’, আগেই সতর্ক করেছিলেন শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান!
আক্রান্ত হওয়ার পর মৈপিঠ থানার পুলিশের সাহায্যে কোনও মতে প্রাণে বেঁচে ফেরেন বনকর্মীরা। জেলা পুলিশের অভিযোগ, কোনও রকম খবর না দিয়েই তল্লাশিতে গিয়েছিল বনদফতর। খবর পেয়ে যখন তাঁরা পৌঁছে তাঁরা উদ্ধার করেন বনকর্মীদের।
অন্যদিকে রাজ্য বন্য প্রাণ রক্ষা কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শের-এর প্রধান জয়দীপ কুণ্ডু এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন,‘‘ ওই অভিযুক্ত পুরনো চোরাশিকারি। দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণ হত্য়ার সঙ্গে যুক্ত। এর আগেও একই রকম অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন,‘‘ বন দফতরের তদন্ত যে ঠিক পথে এগোচ্ছে তারই প্রমাণ এ দিনের হামলা। আমরা চেষ্টা করছি গ্রামের মানুষকে সচেতন করে চোরাশিকার বিরোধী অভিযানকে আরও শক্তিশালী করতে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy