Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

একা আর্সেনিকেই রক্ষা নেই, দোসর ফ্লুয়োরাইড

এ বার ভূগর্ভের জলে যুক্ত হল ফ্লুয়োরাইডের দূষণ।সম্প্রতি রাজ্যের পরিবেশ সংক্রান্ত ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পানীয় জলে ফ্লুয়োরাইড দূষণের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৮
Share: Save:

মাটির তলা থেকে দিনের পর দিন যথেচ্ছ জল তুলে নেওয়ার জেরে রাজ্যে আর্সেনিক-দূষণ ইতিমধ্যেই মাত্রা ছড়িয়েছে। এ বার ভূগর্ভের জলে যুক্ত হল ফ্লুয়োরাইডের দূষণ।

সম্প্রতি রাজ্যের পরিবেশ সংক্রান্ত ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পানীয় জলে ফ্লুয়োরাইড দূষণের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বীরভূমের পাথর খাদান অঞ্চল, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার শুখা এলাকার সঙ্গে সঙ্গে জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ এবং হুগলিতেও ওই দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর এবং বর্ধমানেও ভূগর্ভস্থ পানীয় জলে বিপজ্জনক মাত্রার ফ্লুয়োরাইড ধরা পড়েছে।

ওই রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের ১৩১ ব্লকের ১০৭৩টি গ্রাম এবং একটি পুরসভার প্রায় এক কোটি মানুষ এই বিষাক্ত রাসায়নিকের কবলে পড়েছেন। কিন্তু প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের ফ্লুয়োরাই়ড কবলিত গ্রামীণ এলাকায় পরিস্রুত জল সরবরাহের ব্যবস্থা এখনও পুরো সফল হয়নি।

এই ফ্লুয়োরাই়ড আসলে কী?

পরিবেশবিদেরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের খনিজের মধ্যে মিশে থাকা একটি রাসায়নিক হল এই ফ্লুয়োরাই়ড। ভূগর্ভস্থ জলের মধ্যে মিশে তা অতিরিক্ত পরিমাণে মানুষের শরীরে ঢুকলে নানা ধরনের ব্যাধি ছেঁকে ধরে। তা থেকে সরাসরি মৃত্যু না-হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় হা়ড়, দাঁত, কিডনি, লিভার। শারীরিক বিকৃতিও হতে পারে। ঠিক সময়ে জল পরিবর্তন না-করলে আক্রান্তকে সারাজীবন পঙ্গু হয়েই থাকতে হয়। অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে ফ্লুয়োরাই়ড শরীরে ঢুকলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়।

রাজ্যের পরিবেশ দফতরের তথ্য বলছে, ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লুয়োরাই়ড ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স থেকে শুরু করে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বর্ধমানে। পরিবেশ দফতরের বিজ্ঞানীরা জানান, ফ্লুয়োরাই়ড কবলিত এলাকাগুলির মাটির তলায় হয় প্রাচীন পলিমাটি নয়তো ব্যাসল্ট বা গ্রানাইট পাথর রয়েছে। সেই পাথরে অ্যাপাটাইট, ফ্লুয়োরাইট, বায়োটাইট বা হর্নব্লেন্ডের মতো খনিজ থেকেই ফ্লুয়োরাইডের বিষ ছড়াচ্ছে।

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেল্‌থ-এর প্রাক্তন অধিকর্তা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্সেস-এর এমিরেটাস অধ্যাপক অরুণাভ মজুমদার জানান, এক লিটার পানীয় জলে এক মিলিগ্রাম ফ্লুয়োরাইড থাকলে সেটা স্বাভাবিক ধরা হয়ে থাকে। ফ্লুয়োরাইডের ক্ষেত্রে এটাকেই সহনমাত্রা হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু পরিবেশ দফতরের তথ্য বলছে, এ রাজ্যে পুরুলিয়া, মালদহ, হুগলির মতো জেলায় ফ্লুয়োরাই়ডের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৬-৭ গুণ বেশি। বীরভূমে সেটা প্রতি লিটারে ১৭ মিলিগ্রামের থেকেও বেশি।

এই বিষের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কি কোনও উপায় নেই?

জল-বিজ্ঞানীরা বলছেন, অধঃক্ষেপণ, অধিশোষণ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফ্লুয়োরাইড মিশ্রিত জল পরিশোধনের বেশ কয়েকটি উপায় আছে। ফ্লুয়োরাই়ড কবলিত এলাকায় কিছু প্রযুক্তি কাজেও লাগানো হচ্ছে। কিন্তু এখনও সেই প্রযুক্তি পুরোপুরি কাজে আসছে না। এই বক্তব্য মেনে নিয়েছে পরিবেশ দফতরও।

অরুণাভবাবুর মতে, ‘‘ফ্লুয়োরাইড মোকাবিলায় এই প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি শুধু বসালেই হবে না। তা কাজে লাগানোর মতো দক্ষ কর্মী, নিয়মিত নজরদারিও দরকার।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE