জলমগ্ন হাওড়া। ছবি: পিটিআই
কোথাও ধস নেমেছে। কোথাও তৈরি হয়েছে গর্ত। কোথাও নদীর জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। বাঁধ ভাঙার শঙ্কা নিয়ে দিনযাপন করছেন বাসিন্দারা। কোথাও আবার বৃদ্ধাশ্রমে ঢুকে গিয়েছে জল। বন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন আবাসিকরা। হুগলি, হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও প্লাবন পরিস্থিতি ভয়াবহ। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চিন্তার কারণ বাড়িয়েছে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা। তখন কী হবে, সেই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষকে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলাবতী, ঝুমি, কংসাবতী-সহ একাধিক নদীর জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। জেলায় এখনও পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৭। বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে ঘাটাল শহরের পাশাপাশি ওই মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। বীরসিংহ, অজবনগর, মনসুকা, সুলতানপুর, ইরপালা, মোহনপুর, দেওয়ানচক, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুর, কেশপুর–সহ মোট ২০৯টি এলাকা রয়েছে জলের তলায়। নামানো হয়েছে ১২৭টি নৌকা। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পাউচের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। বিডিও এবং মহকুমাশাসকদের বন্যা কবলিত এলাকার গ্রামে প্রয়োজনে রাতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক রশ্মি কোমল। জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্টও পাঠাচ্ছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কেশপুর ও চন্দ্রকোনায় এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। সাংসদ দেবের মতো তিনিও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আক্রমণ করেন কেন্দ্রকে। মানস বলেন, ‘‘প্রতি বছর পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আটটি ব্লক ডুবে যায়। মানুষ মরে, ফসল নষ্ট হয়, গবাদি পশু মারা যায়, বাড়ি ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি পাল্টায় না। ২০১১ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টানা দিল্লিকে অনুরোধ করছেন। চিঠি দিচ্ছেন। নিজে গিয়েছেন। সেচ মন্ত্রীরাও গিয়েছেন। আমিও গিয়েছিলাম। তা-ও কাজ হয়নি।’’ কেন ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার মাস্টার প্ল্যানকে কমিয়ে ৫০০ কোটি করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ৬ বছর একটি পয়সাও দেয়নি। দেব, আমি সংসদে বলেছি। কিন্তু মন্ত্রীরা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। কোনও উত্তর দেন না।’’ বুধবার ঘাটালে এসে দেবও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী না হওয়া পর্যন্ত এই দুর্দশা থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের পাশাপাশি জল-আতঙ্ক অব্যাহত হুগলিতেও। বুধবার বিকেল থেকে বৃষ্টি হয়েছে হুগলির বিভিন্ন এলাকায়। একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। চুঁচুড়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিক ঘাটের কাছে ধস নেমেছে। চুঁচুড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া যাওয়ার রাস্তাতেও নেমেছে ধস। গঙ্গা তীরবর্তী এই রাস্তার পাশে বাড়িঘর রয়েছে। ধসের কবলে সেই সব বাড়িঘরের ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বাসিন্দাদের মনে। চুঁচুড়ায় মাটির তলা দিয়ে নিকাশি ব্যবস্থা ছিল একটা সময়ে। বর্তমানে সেই ব্যবস্থা বন্ধ হলেও মাটির তলার নিকাশি নালা এখনও রয়েছে। আর ওই সব নালার কারণে এলাকায় ধস নেমেছে বলে মনে করছে প্রশাসন। এর আগে শহরের ডাফ স্কুলের সামনে হুগলি মহসিন কলেজের কাছেও ধস দেখা যায়।
অন্য দিকে হুগলিরই খানাকুলের বিভিন্ন এলাকা এখনও জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও সামান্য জল নামলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আরামবাগের মহকুমাশাসক জাহেরা রিজভি খানাকুলে যান। ছিলেন খানাকুল ২ নম্বর ব্লকের বিডিও শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া তাঁরা মাড়োখানা এবং নন্দনপুর এলাকাও পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের তরফে ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ করা হয়।
হাওড়ার প্লাবন পরিস্থিতিও একই। জেলার উদয়নারায়ণপুরের বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও জলমগ্ন। দামোদরের জল বেড়ে যাওয়ায় চিন্তা আরও বাড়ছে। আমতা ২ নম্বর ব্লকের অমরাগড়িতে বৃদ্ধাশ্রমে জল ঢুকে গিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ আবাসিকরা। আমতার ভাটোরা ও ঘোড়াবেড়িয়া চিতনান দ্বীপাঞ্চল আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেখানেও জলস্তর বিশেষ নামেনি। আমতা এবং উদয়নারায়ণপুরের হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি এখনও জলের তলায়। ধানের পাশাপাশি সব্জি চাষেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মৎস্যচাষেও। প্রশাসনের হিসাবে কমপক্ষে তিন লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy