গত ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে প্রায় ১০ লক্ষ শিশু অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনে (এআরআই) আক্রান্ত হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখে শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত রাজ্যে ৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখন সংক্রমণের ধার কমলেও আরও কিছু দিন সতর্ক থাকতেই হবে। কারণ, দেশের অন্যান্য রাজ্যে অ্যাডিনো ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ ভাইরাসে (এইচ১এন১, এইচ৩এন২ প্রজাতি) আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে একের পর এক শিশু জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়েছে। চলেছে মৃত্যুমিছিলও। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে প্রায় ১০ লক্ষ শিশু অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনে (এআরআই) আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে এক শতাংশ বাংলার। সামগ্রিক ভাবে দেশের পরিসংখ্যানের নিরিখে এই তথ্য স্বস্তির হলেও রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা অ্যাডিনো ও অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়ে নজরদারিতে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছেন না।
নাইসেড সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যে এইচ৩এন২ ইনফ্লুয়েঞ্জা পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। এবং সেটি কলকাতা-কেন্দ্রিক। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, দেশের বিচারে বাংলায় শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কম। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ১ জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত দেশে এআরআইতে আক্রান্ত হয়েছে ৯,৬৭,৭৪৯ জন শিশু। এই সময়কালে বাংলায় ১০ হাজার ৯৯৯ জন শিশু আক্রান্ত হয়েছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।
শনিবার গভীর রাতে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ৭ মাস বয়সের এক শিশুর মৃত্যু হয়। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে বনগাঁর হাসপাতাল থেকে তাকে কলকাতার ওই হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু) এ রাখা হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রবল নিউমোনিয়ার কারণে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই দিন রাতে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ার সংক্রমণ নিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির নাম সোনিয়া পরভিন (১ মাস ৪ দিন)। বাড়ি জলপাইগুড়ির বোধাগঞ্জের নকুগছে।হাসপাতাল সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘সিভিয়র নিউমোনিয়াতে শিশুটি মারা গিয়েছে। এনসেফ্যালাইটিসও ছিল।’’ ২২ ফেব্রুয়ারি শিশুটিকে জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ ছিল কি না, তা জানা যায়নি।আবার, রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ দত্তপুকুরের বাসিন্দা এক শিশুর মৃত্যুর পরে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। গত বুধবার থেকে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ওই শিশু ভর্তি ছিল। এ দিন সকাল ৮ টা নাগাদ ও বিকেল ৪ টে নাগাদ আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয় ওই হাসপাতালে। স্বাস্থ্য দফতর সুত্রের খবর, রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখতে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই ৮ সদস্যের টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, ততদিন পর্যন্ত ওই টাস্ক ফোর্স পরিস্থিতির পর্যালোচনা বৈঠক করবে। যদিও এ দিন কোনও বৈঠক হয়নি। আজ সোমবার টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা প্রথম বৈঠকে বসবেন। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে কোন হাসপাতালে কত শিশু ভর্তি, তাদের মধ্যে কত জন অ্যাডিনোতে আক্রান্ত, পরিকাঠামোর কী অবস্থা, তা খতিয়ে দেখবেন ওই সদস্যেরা। প্রতিটি শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডেথ-অডিট এর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৯৫৫ জন। সেই তালিকায় প্রথম পাঁচের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ নেই। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা- এ ভাইরাসের যে দু'টি প্রজাতির দাপট অন্যান্য রাজ্যে দেখা যাচ্ছে তা বাংলাতে কখন কীভাবে হানা দেবে তা অজানা। তাই প্রতিদিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনার মাধম্যে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি দিকে নজর রাখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy