শিশুমৃত্যু নিয়ে বিধানসভাতে সরব হন বিরোধীরা। প্রতীকী ছবি।
সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। তবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখে পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুমৃত্যু নিয়ে এ দিন বিধানসভাতেও সরব হন বিরোধীরা।
বিসি রায় শিশু হাসপাতাল ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখে ভুগে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা সব থেকে বেশি। তাই, গত বুধবার ওই দু’টি হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ও উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী। এ দিন তাঁদের সঙ্গে নিয়ে ওই দুই হাসপাতালে যান কেন্দ্রীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সদস্য সচিব রূপালি বন্দ্যোপাধ্যায় সিংহ। শিশুদের চিকিৎসার পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন। বৈঠক করেন সেখানকার অধ্যক্ষ, সুপার ও নার্সিং সুপারের সঙ্গে। সূত্রের খবর, সেখানেই উঠে আসে, অন্যান্য রাজ্যেও শিশুদের জ্বর-সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ক্রমশ মাথা চাড়া দিচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলেও রূপালি বৈঠকে জানিয়েছেন বলেই খবর।
বিসি রায়ের অধ্যক্ষ দিলীপ পাল বলেন, ‘‘রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের হাতে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, সেটাই কেন্দ্রীয় কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে। কী ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে, শয্যা কেমন রয়েছে সবই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিকে জানানো হয়েছে।’’ দিন কয়েক আগে তাঁদের সংস্থার ভার্চুয়াল বৈঠকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিনিধিরা ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন বলেও জানাচ্ছেন ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকসের রাজ্য শাখার সভাপতি কল্পনা দত্ত। কলকাতা মেডিক্যালের শিশু রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক কল্পনা বলেন, ‘‘এখন সংক্রমণ কমতে শুরু করছে। সেটাই আশার কথা।’’
বুধবার রাতে কলকাতা মেডিক্যালে মৃত্যু হয় নদিয়ার ফুলিয়ার ১ বছর ২ মাস বয়সের এক শিশু। জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ৪ মার্চ কৃষ্ণনগর হাসপাতাল থেকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছিল তাকে। বুধবার রাতে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে বুধোর ও সোনাডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা সাড়ে ৬ এবং ২ বছরের দুই বালকের মৃত্যু হয়েছে। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে তাদের ভর্তি করা হয়েছিল। সুপার প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন, “মৃত ওই দুই শিশু নিউমোনিয়ায় ভুগছিল।” এ দিন সকালে ন’মাস বয়সের দুই শিশুর মৃত্যু হয় বিসি রায় হাসপাতালে।
অন্য দিকে, ‘নাইসেড’-এর রিপোর্টে কোচবিহারে ছয় শিশুর অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণের রিপোর্ট মিলল। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে সন্দেহজনক ২৫ জন রোগীর সংক্রমণ নিয়ে নিশ্চিত হতে নাইসেডে নমুনা পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে কোচবিহার মেডিক্যালের ১০ জন, তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের ১০ জন, দিনহাটার মহকুমা হাসপাতালের পাঁচ জনের নমুনা পাঠানো হয়। প্রত্যেকের বয়স ১৪ বছরের কম। কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “নাইসেডে পাঠানো নমুনার রিপোর্ট এসেছে। যাদের নমুনায় অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণ মিলেছে, তারা সবাই সুস্থ। বাড়িতে আছে।’’
শিশুমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এ দিন উত্তাপ ছড়ায় রাজ্য বিধানসভায়। এ দিন রোগ মোকাবিলায় সরকারি ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে অধিবেশনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির বিধায়কেরা। অধিবেশনে প্রথমার্ধের শেষে এ বিষয়ে আলোচনা চেয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনে বিজেপি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচনা অনুমোদন না করলেও তা নিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে বিবৃতি দিতে বলেন। চন্দ্রিমা বলেন, “এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গত সোমবার সভায় বক্তৃতা করেছেন। বিরোধীরা তখন অনুপস্থিত ছিলেন।” তারপরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির বিধায়কেরা স্লোগান দিতে দিতে সভাকক্ষ ছেড়ে চলে যান। চন্দ্রিমা পরে বলেন, “কোথায় বলা আছে, অর্থ বিল নিয়ে আলোচনা হলে অন্য কিছু নিয়ে কথা বলা যাবে না? মুখ্যমন্ত্রী তো সে দিন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। উনি (বিরোধী দলনেতা) কথায় কথায় কেন বেরিয়ে যাবেন? উনি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বিধায়ক হয়েছেন না কি, বিধানসভায় থাকার জন্য বিধায়ক হয়েছেন?”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ওঁর(স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী) থেকে আমি বেশি দিনের বিধায়ক। নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। আমি ওঁকে পরে জিতিয়ে এনেছি। এখন ওঁর থেকে আমায় শিখতে হবে কে ভেতরে থাকবে, কে বাইরে থাকবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy