প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানির দিন ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। এর আগে ৭ এপ্রিল মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মামলা থেকে সরে গিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন। ফলে মামলাটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে চলে যায়। এ বার ওই মামলার শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হল। স্থির হল নতুন বেঞ্চও। মামলাটির শুনানি হবে আগামী সোমবার, ২৮ এপ্রিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চ এই মামলা শুনবে।
বিচারপতি সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চে গত সোমবার প্রাথমিকের চাকরি বাতিল মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারপতি সেন সরে দাঁড়ানোয় জটিলতা তৈরি হয়। পিছিয়ে যায় শুনানি। আইনজীবীরা বলেছিলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি যেন এমন বেঞ্চে মামলা পাঠান, যেখানে দ্রুত শুনানি হবে।” এর পর থেকেই জল্পনা ছিল, কবে কোন বেঞ্চে এই মামলা যায়। মূল মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অবশেষে সোমবার সবই জানিয়ে দিল উচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন:
২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে নিয়োগ হয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে। সেই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিল রাজ্য। সেই শুনানি হবে ২৮ এপ্রিল। এ ছাড়া, এই সংক্রান্ত আরও একটি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিংহ ৪২ হাজার নিয়োগের প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশ পেয়েছে।
কিছু দিন আগে এসএসসি-র ২৬ হাজার চাকরি (২৫,৭৩৫) বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এসএসসি মামলার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনিই প্রথম এই মামলা শোনেন এবং ৮১৬১টি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। ডিভিশন বেঞ্চেও সেই নির্দেশ বহাল ছিল। পরে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেখান থেকে এসএসসি মামলা আবার ফেরানো হয় হাই কোর্টে। বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে বিচারপ্রক্রিয়া শেষের নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সাড়ে তিন মাসেই সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে। এর ফলে বাতিল হয়ে গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের চাকরি। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। সেখানেও পুরো প্যানেল বাতিলের রায়ই বহাল রাখা হয়। বলা হয়েছে, এই ২৫,৭৩৫ জনের মধ্যে যে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’, তাঁদের কাছ থেকে বেতনও ফেরত নিতে হবে। বাকিদের মধ্যে যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা যায়নি। তাই সকলেরই চাকরি গিয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পথে নেমেছেন চাকরিহারারা। তাঁরা নতুন করে পরীক্ষা দিতে রাজি নন। অভিযোগ, পরীক্ষা নিয়ে সমস্ত নিয়ম মেনে তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও কেন তাঁদের ভুগতে হবে? প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিহারাদের অনেকে। শহরে তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভও চলছে। আদালতের রায় নিয়ে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাবে রাজ্য সরকার। তার মাঝেই এ বার প্রাথমিকের চাকরি বাতিলের মামলার শুনানির দিন ঘোষণা করল হাই কোর্ট।