Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Pous Mela

রবীন্দ্র-আদর্শ সরিয়ে আরএসএসের আদর্শ, উপাচার্যকে আক্রমণ ফিরহাদের

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিশ্বভারতী জানিয়েছিল, পৌষমেলার অতিথি তালিকায় এমন অনেকের নাম আছে, যাঁদের বিরদ্ধে সিবিআই-ইডি তদন্ত চালাচ্ছে।

বিকল্প পৌষমেলার উদ্বোধনে (ডান দিক থেকে) মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশ্বভারতীর  প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন।

শুক্রবার বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

বাসুদেব ঘোষ 
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৬
Share: Save:

‘বিকল্প’ পৌষমেলার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার ২৪ ঘণ্টা পরে, শুক্রবার সেই মেলারই উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারাকে সরিয়ে শান্তিনিকেতনে আরএসএসের চিন্তাধারা নিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করলেন মন্ত্রী।

জেলা প্রশাসন, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ ও ব্যবসায়ীসমিতির উদ্যোগে শুক্রবার থেকে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে শুরু হয়েছে ‘বিকল্প’ পৌষমেলা। সকালে উপাসনা গৃহের কাছ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করা হয়। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন পুরমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেনরাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন দুই উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত ও সবুজকলি সেন, পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত, ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী

নিজেদের বক্তব্যে কেউ নাম করে, কেউ নাম না করে বিশ্বভারতী পৌষমেলা না করার জন্য উপাচার্যকে দায়ী করেন। ফিরহাদ বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের সময়ও আর্থিক অনটনে বিশ্বভারতী ভুগেছে। কিন্তু, জরুরি অবস্থা ছাড়া কখনও মেলা বা বসন্ত উৎসব বন্ধের কথা তারা ভাবেনি। অথচ আজ সব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে আমরা পৌষমেলা বন্ধ করতে দেব না।’’

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিশ্বভারতী জানিয়েছিল, পৌষমেলার অতিথি তালিকায় এমন অনেকের নাম আছে, যাঁদের বিরদ্ধে সিবিআই-ইডি তদন্ত চালাচ্ছে। ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের’ সঙ্গে এক মঞ্চে উপাচার্য থাকবেন না বলেও জানানো হয়। সেই প্রসঙ্গ তুলে এ দিন উপাচার্যকে কটাক্ষ করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনি শান্তিনিকেতনের উপাচার্য। আপনার ঔদ্ধত্য থাকবে কেন! আপনি বললেন যারা দাগী, যাদের নামে কেস আছে, তাদের পাশে থাকব না। আপনাকে যারা নিয়োগ করেছে, তারাও জেল খেটেছে, তাদেরও কেস আছে। সরকার পাল্টানোর পর তাদের ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে।’’ মন্ত্রীর অভিযোগ, যাঁরা ভাবেন রবীন্দ্রনাথের আদর্শের চেয়ে বড় আরএসএসের আদর্শ, তাঁরা বাংলার মানুষকে দুঃখিত করেন। অবহেলিত করেন রবীন্দ্রনাথকে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও পুরমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘কোর্ট না বলা পর্যন্ত কেউ দোষী নন। উনি (উপাচার্য) কেন রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারাকে সরিয়ে আরএসএসের চিন্তাধারা নিয়ে আসছেন। উনি বাংলা সংস্কৃতিকে নষ্ট করার এজেন্ডা নিয়ে এসেছেন। আমার মনে হয় ওঁর উপাচার্য থাকা উচিত নয়।’’

পৌষমেলা না-করলেও চিরাচরিত প্রথা মেনে এ দিন ভোরবেলায় বৈতালিক ও ছাতিমতলায় উপাসনার মধ্য দিয়ে পৌষ উৎসব পালন করেছে বিশ্বভারতী। উপাসনা বেদি থেকে নানা বিষয়ে সরব হন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘রাবীন্দ্রিক বলতে আমি এখানে শুনেছি রাবীন্দ্রিক হল একটা রাস্তা। যে রাস্তার মাধ্যমে দায়িত্ব এবং কর্তব্য দু’টিই আসে। কিন্তু বিশ্বভারতীর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি অধিকারের ব্যাপারে সবাই খুব সচেতন। কিন্তু দায়িত্ব বা কর্তব্য সে সম্বন্ধে আমরা সচেতন নই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গত তিন সপ্তাহ আমরা মন্দির (উপাসনা) করতে পারিনি। কিন্তু মন্দিরের ঐতিহ্য সম্বন্ধে যাঁরা এত সচেতন, এত কথা বলেন, আমি তাঁদের জিজ্ঞাসা করতে চাই রাবীন্দ্রিক মানে কি স্বার্থরক্ষার পদ্ধতি? এটুকু বুঝেছি রাবীন্দ্রিক ঐতিহ্য মানে অনেকের কাছে স্বার্থসিদ্ধির পন্থা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy