সিউড়ির রবীন্দ্রসদনের বর্ধিত সভায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
কী প্রশ্ন ধেয়ে আসে, তা ভেবে ভয়ে ভয়ে ছিলেন সকলেই। কিন্তু, ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা বা কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো নয়, বরং খানিকটা ‘নেতিয়ে’ পড়া দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টাই করলেন বীরভূমে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। আর জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে আখ্যা দিলেন ‘লৌহপুরুষ’ হিসাবে।
রবিবার বিকেলে সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে তৃণমূলের বর্ধিত কমিটির বৈঠকে নিচুতলার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ বলেন, ‘‘একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। জেলা সম্মেলনে এসেছেন। সবাই এত গম্ভীর হয়ে রয়েছেন কেন? কেন মুখে হাসি নেই? কেন বিজেপির দু-চারটে বিজয় মিছিল দেখে ম্লান হয়ে গিয়েছেন?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনারা বরং গর্ব করুন মোদী হাওয়া অন্য জায়গায় ঢুকলেও লৌহপুরুষের সহযোদ্ধা হয়ে লড়াই করে বীরভূমে সেই হাওয়া ঢুকতে দেননি। আপনাদের সেলাম করার জন্যই আমি এখানে এসেছি।’’
এ দিন বিকেল ৩টে থেকে ঘণ্টা দুয়েকের ম্যারাথন বৈঠকে পুরমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, জেলার দুই মন্ত্রী অশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রনাথ সিংহ, দলের বিধায়ক ও জেলা নেতারা। সব ব্লক সভাপতি ছাড়াও বৈঠকে ডাক পেয়েছিলেন প্রতিটি অঞ্চলের সভাপতি, প্রধান ও উপ-প্রধানেরা।
ভোট পরবর্তী সভায় কী ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, তা নিয়ে উৎকন্ঠায় ছিলেন নেতারা। কারণ জেলার দু’টি লোকসভা আসন ধরে রাখতে পারলেও ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। বীরভূমের ১১টি বিধানসভার মধ্যে ৫টিতে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে প্রায় অর্ধেকে কাঙ্ক্ষিত ফল মেলেনি। নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা ছিল, হয়তো সেই বিষয়ে কাঁটাছেঁড়া হবে। পড়তে হতে পারে অপ্রিয় প্রশ্নের সামনেও। কিন্তু সে পথে না হেঁটে আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে রণকৌশল ঠিক কী হবে, সেই পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টাই ফিরহাদ-অনুব্রতেরা এ দিন করেছেন বলে দল সূত্রের খবর। এমনকি সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতেতে যে বক্তব্য তাঁরা রেখেছেন, সেখানেও একই ইঙ্গিত।
কর্মীদের মনোবল বাড়াতে বীরভূমের বিজেপিকে কখনও ‘ছাগলের তৃতীয় বাচ্চা’ হিসাবে কটাক্ষ করেছেন ফিরহাদ। দলের অসময়ে দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া দলের কর্মীদের ইঁদুর ও দলের কর্মীদের সাহসী নাবিকের সঙ্গে তুলনা করেছেন ফিরহাদ। ফিরহাদ কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘বর্ধমান থেকে বীরভূমে আসার পথে দেখলাম, ছাগলের তিনটে বাচ্চা। দুটো মায়ের দুধ খাচ্ছিল আর একটা বাচ্চা তিরিংতিরিং করে লাফাচ্ছিল। টিভিতে দেখছিলাম, বিজেপি বীরভূমে বিজয় মিছিল করছে। মনে হল, শতাব্দী রায়, অসিত মাল জেতেননি বোধহয়। তা না হলে ওরা কেন বিজয় মিছিল করছে! বীরভূমে বিজেপির অবস্থা
ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মতো। বীরভূম তো ওরা জেতেনি।’’
মনোবল বাড়াতে ওড়িশার উদাহরণ টেনে ফিরহাদ বলেন, ‘‘একই রাজ্যে একই লোক বিধানসভা ও লোকসভায় আলাদা জায়গায় ভোট গিয়েছে। তাই হতাশ হওয়ার কোনও জায়গা নেই। বরং মানুষের কাছে যেতে হবে। বিশেষ করে তফসিলি জাতি-জনজাতির মানুষের কাছে। যাঁরা ভুল বুঝেছেন। বিশ্রামের সময় নেই। এখান সময় হচ্ছে লড়াই করার।’’
অনুব্রত মণ্ডলও দলের নেতা-কর্মীদের ভয় না পেয়ে ‘ফোঁস’ করার পরামর্শ দিয়েছেন। দলের অন্দরের খবর, মানুষের পাশে থেকে দুর্নীতি-মুক্ত হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতিতে যুক্তদের পাশে দল থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বৈঠক ফেরত কিছু নেতার বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলের কিছু নেতাকর্মীর ভুল পদক্ষেপের জন্য এলাকায় বিজেপির শক্তি বেড়েছে। সেখান থেকে শক্তি পুনরুদ্ধার খুব সহজ হবে না।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy