Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Ajodhya Hills

ফের আগুন শুশুনিয়া, অযোধ্যা, পঞ্চকোট পাহাড়ের জঙ্গলে, অভিযোগ

স্থানীয় দুষ্কৃতীদের একাংশই জঙ্গলে আগুন লাগিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে বন দফতর।

আগুনে জ্বলছে অযোধ্যার জঙ্গল

আগুনে জ্বলছে অযোধ্যার জঙ্গল ছবি: দুর্গাদাস মহান্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ২০:৫৫
Share: Save:

বছর ঘোরার আগেই ফের আগুন লাগল বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে। ইতিমধ্যেই আগুনে বেশ কয়েক হেক্টর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। আগুনে ঝলসে শুশুনিয়ার বেশ কিছু বন্যপ্রাণী এবং পাখির মৃত্যুরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের একাংশই জঙ্গলে আগুন লাগিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে বন দফতর। গত এপ্রিলেও শুশুনিয়া পাহাড়ের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে আগুন লেগেছিল।

ভয়াবহ আগুন লেগেছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় সন্নিহিত বিভিন্ন বনাঞ্চলেও। পুড়ছে জঙ্গল ছুটছে বন্যপ্রাণ। মাসখানেক আগে থেকেই জঙ্গলে আগুন লাগানোর না আবেদন জানিয়ে প্রচার শুরু করেছিল পুরুলিয়া বন বিভাগ। নেটমাধ্যমে প্রচারিত আবেদনে বলা হয়, ‘জঙ্গলে আগুন লাগানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে জেল ও জরিমানা দুই হতে পরে। জঙ্গলে আগুন লাগার ফলে গাছ গাছপালা ও বন্যজীবের প্রচুর ক্ষতি হয়। জঙ্গল আপনার,আমার। একে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের সকলের। জঙ্গলে আগুন লাগলে নিকটবর্তী বনদফতরের কার্যালয় খবর দিন’। কিন্তু এই আবেদন সত্ত্বেও প্রতিবারের মত এ বছরও চিত্র একই। রোজই কোনও না কোনও পাহাড়, জঙ্গলে লাগছে আগুন। পুড়ছে গাছপালা। মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণ।

পুরুলিয়া বনবিভাগের বলরামপুর, আড়শা, কোটশিলা, ঝালদা, অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি রেঞ্জের অযোধ্যা পাহাড় থেকে মাঠা, কংসাবতী-দক্ষিণ বন বিভাগের বন্দোয়ানের লোটো ঝরনা, নান্না। কংসাবতী-উত্তর বনবিভাগের রঘুনাথপুর রেঞ্জের গড় পঞ্চকোট, বরন্তি, দণ্ডহিত থেকে জয়চণ্ডী পাহাড়। আগুন লাগার খবর পেলেই ঘটনাস্থলে ছুটছেন বনকর্মীরা। সঙ্গে থাকছেন স্থানীয় যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যরাও। কিন্তু আগুন নেভানোর ‘অস্ত্র’ বলতে শুধুই কাঁচা গাছের ডালপালা। কারণ, এখন পর্যন্ত এই জেলায় দফতরের হতে নেই আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনও যন্ত্র। ফলে প্রখর রোদে ঘাম ঝরিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণ পেলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে। একই চিত্র বাঁকুড়াতেও।

তাছাড়া পাহাড়ের চড়াই-উৎরাইয়ে দমকল বাহিনীও ঠিক ভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলে বৃষ্টির অপেক্ষায় বন দফতর। পুরুলিয়া বন বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ ভদানা বলেন, ‘‘আগুন লাগার খবর এলেই স্থানীয় যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যেরা আমাদের সঙ্গে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করছেন। আমরা বার বার মানুষের কাছে আবেদন রাখছি যাতে তাঁরা জঙ্গলে আগুন না লাগান।’’ প্রসঙ্গত, অযোধ্যা এবং পঞ্চকোটেও একাধিক বার আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিককালে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান ছোটনাগপুর মালভূমির পাহাড়-জঙ্গলে গাছের ঘর্ষণে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই। এখানে আগুনের কারণ মানুষ। স্থানীয়দের অনেকেই জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ, পাতা, ফলমূল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। পাতা ঝরার মরশুমে জঙ্গলের পায়ে হাঁটা পথ শুকনো পাতায় ভরে যায়। যার তলায় লুকিয়ে থাকতে পারে বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপ। সে কারণে রাস্তা ও জঙ্গল পরিষ্কার করতে অনেকে আগুন লাগিয়ে দেন। পাশাপাশি, গাছ জ্বালিয়ে কাঠকয়লা বানানোর উদ্দেশ্যে কিংবা মহুয়া বীজ সংগ্রহের জন্যও জঙ্গলে আগুন লাগানো হয়।

বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘গ্রীষ্মের গোড়া থেকেই পাহাড়-জঙ্গলে জলের সমস্যা তৈরি হয়। এই সময় শুকনো পাতায় আগুন লাগিয়ে দেয় কিছু চোরাশিকারি। এর ফলে সজারু, হরিণ, বুনো শুয়োর, খরগোশ প্রাণভয়ে ছুটে ফাঁকা যায়গায় চলে যায়। সেখানে শিকারিদের পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে তারা। মারা পড়ে ময়ূর এবং বনমোরগও। তবে এই আগুনের গ্রাসে বহু কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ মারা যায় এবং জীববৈচিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয় বলে দাবি পরিবেশবিদদের। বাঘমুন্ডির পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের কর্মী অক্ষয় ভগত জানিয়েছেন, জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনা প্রতিরোধ এবং দোষীদের চিহ্নিত করার দাবিতে শুক্রবার স্থানীয় থানা, বনবিভাগ এবং বিডিও-র দফতরে তাঁরা স্মারকলিপি জমা দেবেন তাঁরা। পাশাপাশি, গ্রামগুলিতে নতুন করে সচেতনতা প্রচার শুরু হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE