প্রতীকী ছবি।
এত দিন এড়িয়ে চলাই ছিল নবান্নের লক্ষ্য। মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সচিত্র প্রচারে বিজেপি ফায়দা লুটতে পারে বলেই আয়ুষ্মান ভারতের মতো কেন্দ্রের বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্প রূপায়ণে তৃণমূল সরকারের অনীহা ছিল বলে রাজ্য প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তৃণমূল সরকারের পাল্টা বক্তব্য ছিল, কেন্দ্রের পিএম কিসান বা আয়ুষ্মান ভারতের সমতুল প্রকল্প তো রাজ্য সরকার নিজেরাই চালু করেছে। তা হলে আর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার দরকারটা কী!
কিন্তু তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে ‘দুয়ারে সরকার’-এর মতো কর্মসূচি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো কল্যাণ প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার প্রচণ্ড আর্থিক চাপে পড়ে গিয়েছে। ওই সব সামাজিক প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মুকুটে একের পর এক পালক যোগ করে চলেছে ঠিকই। শাসক দল তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে পেরেছে। আবার ওই সব প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে কোষাগারে চাপও অনেকটা বেড়েছে। এই অবস্থায় নবান্নের শীর্ষ মহল যেখানে সম্ভব, সেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে চালু প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে বলে প্রশাসনের অন্দরের খবর। প্রশাসনিক কর্তারা বেশ কয়েকটি দফতরকে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠছে, বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় প্রকল্পেই তো প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকে। সেই সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা নিতে শুরু করলেও মোদীর ছবি রাখতে রাজ্য সরকার রাজি হবে কি? উত্তর মিলছে না এই প্রশ্নের।
আমলাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগে কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান রেখে চলছিল নবান্ন। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অংশীদারি গ্রহণ করা হবে কি না, সেই বিষয়ে নবান্নের অনুমোদন নিতে হত দফতরগুলিকে। সেই পদ্ধতি পুরোপুরি অবলুপ্ত হয়েছে, এমনও নয়। তবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন দফতরকে পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বড় অংশীদারি গ্রহণ করছে রাজ্য। অন্য ক্ষেত্রেও সেই সম্ভাবনা যাচাই করছেন বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা।
শুরুতে কেন্দ্রের পিএম কিসান প্রকল্প গ্রহণ না-করে রাজ্য নিজেরাই কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু করেছিল। পরে অবশ্য কেন্দ্রের ওই প্রকল্পে সায় দিয়েছে রাজ্য। কেন্দ্রের ফসল বিমা যোজনা থেকে সরে এসে রাজ্যই কৃষকদের শস্য বিমার ব্যবস্থা করেছে। আবার কেন্দ্রের ফর্মালাইজ়েশন অব মাইক্রো ফুড প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজ়েস বা এফএমই প্রকল্পে এখনও সায় দেয়নি রাজ্য। আবার কিছু প্রকল্পে কেন্দ্রের অংশীদারি থাকলেও রাজ্যের বরাদ্দ বেশি বা সমান হওয়ায় সেই প্রকল্পের নতুন নামকরণও হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের যুক্তি, কেন্দ্রের অংশীদারিতে যদি তাদের নাম বা প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকতে পারে, তা হলে সমান বা কেন্দ্রের থেকে বেশি অংশীদারি থাকলে রাজ্যের নিজস্ব নাম বা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া অনৈতিক নয়। এক কর্তা বলেন, “নীতিগত প্রশ্নে নবান্নই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে যে-সব প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অংশীদারি পাওয়া সম্ভব, তা অবহেলা করার কোনও যুক্তি নেই। তেমন অবস্থানে অনড়ও নয় রাজ্য। কারণ, কেন্দ্র তো নিজেরা টাকা দেয় না! রাজ্যগুলির কাছ থেকে কর বাবদ তারা যে-অর্থ আদায় করে, তারই ভাগ দেয়। ফলে রাজ্যের টাকাই রাজ্যের হাতে ফিরে আসে।”
প্রবীণ আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, গত বছর করোনাকালে আয় বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। এ বছর অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। রাজ্যের আয়ও বাড়ছে। তবে আগের এবং নতুন সামাজিক প্রকল্পগুলির আর্থিক ভার এখন অনেক বেশি। ফলে সব ধরনের প্রকল্প বাধাহীন ভাবে চালাতে নতুন করে পরিকল্পনা করা জরুরি। সেই কারণেই কোথা থেকে কী ভাবে কেন্দ্রীয় অর্থ পাওয়া যায়, চলতি পরিস্থিতিতে তা খোঁজখবর করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy