Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Triple Unnatural Death in Garia

দেখনদারির তলায় চাপা অভাব, টাকা নেই ডাক্তার দেখানোরও! অর্থকষ্টেই কি চরম সিদ্ধান্ত মৈত্রদের?

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মৈত্র পরিবারের কাউকেই তেমন বাইরে দেখা যেত না। ছেলে সুমনের পায়ের কিছু সমস্যা ছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু কেন চরম সিদ্ধান্ত? তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে।

আবাসনে তিন মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য।

আবাসনে তিন মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪০
Share: Save:

বাবা ছিলেন সেরামিক ইঞ্জিনিয়ার। ছেলেবেলা থেকে অভাব কাকে বলে জানা ছিল না ৩৯ বছরের সুমন মৈত্রের। আগাগোড়া ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা। এমনকি বাড়িতেও নিজেদের মধ্যে কথোপকথন চলত ইংরেজিতে। এ হেন ধোপদুরস্ত জীবনে কি ইদানীং ছায়া ফেলেছিল অবসাদ এবং অর্থাভাব? মামা আর্থিক সাহায্য করতেন বটে। কিন্তু মামার কাছে হাত পাততে কাঁহাতক ভাল লাগে! শেষ পর্যন্ত কি ‘লুকোনো অভাবে’ই চরম সিদ্ধান্ত নিল গড়িয়া গড়াগাছার বহুতল আবাসনের বাসিন্দা মৈত্র পরিবার?

বুধবার দুপুর নাগাদ নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার গড়িয়া গড়াগাছায় একটি বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় মা, বাবা এবং ছেলের ঝুলন্ত দেহ। জানা যায়, বয়স্ক ব্যক্তির নাম স্বপন মৈত্র, বয়স ৭৫ বছর। তাঁর স্ত্রী অপর্ণা, বয়স ৬৮ এবং ছেলে সুমনের বয়স ৩৯ বছর। পুলিশ সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটের ডাইনিং স্পেসে ছেলে সুমন, একটি বেডরুমে তাঁর মা অপর্ণা এবং অপর বেডরুমে বাবা স্বপনের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মৈত্র পরিবারের সঙ্গে কারও তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তবে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেও তাঁদের দেখেননি কেউ। মূলত, নিজেদের মতোই থাকতেন মৈত্ররা। মাঝেমাঝে ফ্ল্যাটে আসতেন এক ব্যক্তি। তিনি সুমনের মামা দেবাশিস ঘোষ। পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর ২৮ ডিসেম্বর দেবাশিসই এসেছিলেন বোনের বাড়িতে। ঘটনার খবর পেয়েও ছুটে এসেছেন দেবাশিস। তাঁর দাবি, ওই পরিবারকে আর্থিক ভাবে তিনিই দেখাশোনা করতেন। ফ্ল্যাটটিও তাঁর। ২৮ তারিখ যখন তিনি বোন, ভাগ্নে, ভগ্নিপতির সঙ্গে দেখা করতে এলে তাঁকে কেকও খাওয়ানো হয়। পুলিশ ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে কেক বেক করার সামগ্রী পেয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী দেবাশিস বলেন, ‘‘আমিই আর্থিক ভাবে ওদের দেখাশোনা করতাম। শেষ যে দিন এসেছিলাম, সে দিনও ডাক্তার দেখানোর টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিতে চায়নি।’’

প্রসঙ্গত, হার্টের সমস্যা ছিল স্বপনের। কিছু দিন আগে তাঁর বাইপাস সার্জারিও হয়। সম্প্রতি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডাক্তারের ফি দেওয়ার মতো টাকা ছিল না মৈত্র পরিবারের কাছে। আবার দেবাশিস যখন গত ২৮ ডিসেম্বর ডাক্তার দেখানোর জন্য সেই টাকা দিতে চেয়েছেন বলে দাবি করছেন, সেই টাকা নেননি সুমনরা। যা শুনে অনেকেই বলছেন, হয়তো হাত পেতে বার বার টাকা নিতে মন সায় দিত না মৈত্রদের। স্থানীয়রা বলছেন, মৈত্র পরিবারের চালচলন ছিল আদতে ধোপদুরস্ত। আর্থিক সচ্ছলতা যে ছিল, তার প্রমাণ হিসাবে স্থানীয়রা বলছেন, ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাবদ প্রদেয় টাকা মৈত্র পরিবার ছ’মাসের অগ্রিম হিসাবে দিয়ে দিতেন। কিন্তু তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, আদতে ঘোর আর্থিক সমস্যায় ভুগছে পরিবারটি।

ছেলে সুমন আগাগোড়া ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছেন। যদিও ইদানীং তিনি কিছু করতেন না বলেও স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। তাঁর পায়ে একটু সমস্যা ছিল বলে জানা যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অভাবের পাশাপাশি মানসিক অবসাদেও হয়তো ভুগছিলেন সুমন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন, তা হলে কি অভাবের পাশাপাশি অবসাদে ভুগেই মা-বাবাকে খুন করে আত্মঘাতী হলেন সুমন? না কি এই সিদ্ধান্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে মিলেই নেওয়া?

অন্য বিষয়গুলি:

police Housing Complex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy