দুর্গতিনাশিনী: বেলুড় মঠের এ বারের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
১১৯তম বছরের পুজোয় দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। এ বার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পুজোর জায়গায় নির্দিষ্ট ১৫ জন সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী প্রবেশ করবেন, এই সিদ্ধান্ত নিলেন বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, ওই কয়েক জন ছাড়া অন্যেরা প্রায় ১৫ ফুট দূর থেকে পুজো দেখবেন। ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আজ, পঞ্চমী থেকে সরাসরি পুজোর সম্প্রচার দেখতে পাবেন মঠের নিজস্ব ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে।
মঠ সূত্রের খবর, করোনা সংক্রমণ রোধে বেশ কয়েক মাস ধরে বেলুড় মঠে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। পুজোর সময়েও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। বরং কড়াকড়ি আরও বাড়ছে। সংবাদমাধ্যমের জন্যও নির্দিষ্ট দিন ও নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে বিশেষ পাস দেওয়া হচ্ছে। মঠের মূল প্রবেশপথের জীবাণুনাশের টানেল পেরিয়েই পুলিশকর্মী ও সংবাদমাধ্যমকে ভিতরে ঢুকতে হবে। ভক্ত ও দর্শনার্থীরা পুজো দিতে চাইলে মূল প্রবেশপথের বাঁ দিকের কাউন্টারে তা জমা দিতে পারবেন। তবে সেখানে যাতে কোনও ভাবেই দর্শনার্থীদের ভিড় না জমে, সে দিকে কড়া নজরদারি চালাবে পুলিশ। সেখানে এর জন্য থাকবে পুলিশ ক্যাম্প।
বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজো হয় ১৯০১ সালে। জানা যায়, স্বামী বিবেকানন্দ যখন দুর্গাপুজো করবেন বলে মনস্থির করেন, তখন পুজোর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি ছিল। তাঁর নির্দেশে এক সন্ন্যাসী কুমোরটুলিতে গিয়ে জানতে পারেন, সব প্রতিমারই বায়না হয়ে গিয়েছে। তবে এক শিল্পী জানান, একটি প্রতিমা কোনও কারণে এক জন না নিলে সেটি পাওয়া যেতে পারে। কয়েক দিন পরেই খবর আসে, ওই প্রতিমার বায়না বাতিল হয়েছে। প্রথম বছরের পুজোয় পুরোহিত ছিলেন কৃষ্ণলাল নামে এক নবীন ব্রহ্মচারী। তন্ত্রধারক হয়েছিলেন স্বামী রামকৃষ্ণানন্দের পূর্বাশ্রমের পিতৃদেব ঈশ্বরচন্দ্র ভট্টাচার্য। পুরনো মন্দির ও স্বামী বিবেকানন্দের ঘরের মাঝের অর্ধচন্দ্রাকৃতি অংশে হোগলার ছাউনি করে হয়েছিল পুজো। রামকৃষ্ণদেবের গৃহী ভক্তেরা ছাড়াও বেলুড়, বালি ও উত্তরপাড়ার বহু মানুষ নিমন্ত্রিত ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের ইচ্ছানুসারেই পুজোর সময়ে মঠে উপস্থিত ছিলেন শ্রী মা সারদাদেবী। তাঁর নামেই পুজোর ‘সঙ্কল্প’ হয়েছিল। সেই ধারা অনুযায়ী এখনও সারদাদেবীর নামেই মঠের দুর্গাপুজো হয়।
আরও পড়ুন: নৈতিক দায়িত্ব? সে তো শুধু ব্যারিকেড পর্যন্ত
১৯৪২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের (মূল মন্দির) ভিতরে পুজোর আয়োজন হতে থাকে। এর পরে মূল মন্দির সংলগ্ন মাঠে মণ্ডপ করে শুরু হয় পুজো। করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর ফের পুজোর স্থান পরিবর্তন হয়েছে। মূল মন্দিরের নাটমন্দিরের পূর্ব দিকের দেওয়াল বরাবর কাপড় দিয়ে ঘিরে পূর্ব দিকের দরজার কাছে বানানো হয়েছে ছোট কাপড়ের ঘর। তাতেই বসানো হয়েছে একচালার সাবেক প্রতিমা। পশ্চিম দিকের দরজা ও বারান্দায় ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। সেখানে হবে কুমারী পুজো। সূত্রের খবর, পুরোহিত, তন্ত্রধারক, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী মিলিয়ে ১৫ জনের তালিকা তৈরি হয়েছে। তাঁরাই ওই পুজোর জায়গায় থাকতে পারবেন।
মঠ সূত্রের খবর, বেলুড় মঠের নিজস্ব ওয়েবসাইট www.belurmath.org, ইউটিউবে belurmath.tv অথবা Ramakrishna Math & Ramakrishna Mission, Belur Math এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় Ramakrishna Math & Ramakrishna Mission, Belur Math পেজে সরাসরি পুজোর সম্প্রচার দেখা যাবে। পঞ্চমীর দিন মূল মন্দিরের সন্ধ্যা আরতি দিয়ে শুরু হবে সেই সম্প্রচার। দশমীর বিসর্জনও সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টির আশঙ্কায় নিকাশি দফতরে ছুটি বাতিল
পুজোর চার দিন মন্দির চত্বরও বার বার জীবাণুমুক্ত করা হবে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তরফে স্বামী জ্ঞানব্রতানন্দ বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও হাইকোর্টের নির্দেশ ও সমস্ত স্বাস্থ্য-বিধি মেনে ছোট আকারে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy