—প্রতীকী ছবি।
অস্ত্রোপচারের পরে এককালীন টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ। দেওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসকদের উৎসাহ ভাতাও। যার জেরে ধাক্কা খাচ্ছে মহিলা বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচি। এর ফলে, রাজ্যে মাতৃ-মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ স্বাস্থ্য কর্তারাই। আবার, ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বাদের পরীক্ষার (অ্যান্টিনেটাল চেকআপ) পরে সুষম খাবারের খরচও চালানো যাচ্ছে না টাকার অভাবেই। ফলে চিকিৎসকের কাছে আসছেন না প্রসূতিও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্যে ‘মেটারনাল মর্টালিটি রেশিয়ো’ বা মাতৃ-মৃত্যুর হার ৭০-র নীচে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে ভাবে টাকার অভাবে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিগুলি খুঁড়িয়ে চলছে, তা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে বলেই মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। যদিও স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের দাবি, ‘‘কেন্দ্রের টাকা না পেলেও, রাজ্যের অর্থ দফতরের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েই ওই সমস্ত কর্মসূচি চালানো হবে।’’ প্রসঙ্গত, এই মিশনের আওতাধীন প্রকল্পে ৬০ শতাংশ টাকা দেয় কেন্দ্র, বাকি ৪০ শতাংশ রাজ্যের। রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্র অনিয়মিত টাকা পাঠানোয় প্রকল্প থমকে যাচ্ছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, দু’টি কিংবা তার বেশি সন্তান রয়েছে এমন মহিলাদের বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচির হার গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ১৪.২১ শতাংশ কম হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে রাজ্যের ২৮টি জেলা (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) মিলিয়ে মহিলা বন্ধ্যত্বকরণের সংখ্যা ছিল ৯১ হাজার ৪৪৬। চলতি বছরে ওই একই সময়কালে সংখ্যাটি কমে হয়েছে ৭৮ হাজার ৪৪৮। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের প্রশ্ন, টাকা কোথায় যে কর্মসূচি চালানো হবে? সূত্রের খবর, চলতি বছরে ওই সাত মাসে কোনও জেলাতেই তেমন ভাবে টাকা দিতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। যতটুকু পাওয়া গিয়েছে তা, ১০ ভাগের এক ভাগ।
স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় চলা বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচিতে মহিলাদের অস্ত্রোপচারের পরে এককালীন ১১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। আর, স্ত্রী শল্য চিকিৎসককে ১০০ টাকা উৎসাহ ভাতা এবং অস্ত্রোপচারের পরে মহিলাকে বাড়ি পাঠানোর জন্য গাড়ি-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও কিছু টাকা দেওয়ার নিয়ম। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘অসংখ্য মহিলার প্রাপ্য এককালীন টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরে বাড়ি পাঠানোর গাড়ির টাকাও বাকি রয়েছে। কত আর ধার বাকিতে চলে?"
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সঙ্গে রাজ্যে মোট মাতৃ-মৃত্যুর অন্তত ৩০ শতাংশের সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে দু’টি বা তার বেশি সন্তানের জননীর বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, অল্প বয়সে সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় অপুষ্টিতে ভোগেন বহু মা। সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও সকলে পুষ্টিকর খাবার পান না। তার উপরে পর পর সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে অনেকেই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপুষ্টি ও রক্তাল্পতায় ভোগা শরীর ধকল নিতে না পারায় প্রসবের সময় মৃত্যুও হয় অনেকের।
সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ এর (২০১৭-১৯ সালের) পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে মাতৃ-মৃত্যুর হার ছিল ১০৭। অর্থাৎ এক লক্ষ প্রসবের (যেখানে সন্তান জীবিত) ক্ষেত্রে ১০৭ জন মা মারা যান। সারা দেশে যা তখন ছিল ১০৩ (যদিও রাজ্যের দাবি, রাজ্যের হারও এখন ১০৩-এ নেমেছে)। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সঙ্গে এই মৃত্যুর যোগ রয়েছে। কর্মসূচিগুলি চালানোর জন্য কেন্দ্র যেমন সময়মতো টাকা দিচ্ছে না, তেমনি রাজ্যও টাকা দিচ্ছে না।’’
অন্য দিকে, ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান’ প্রকল্পে প্রতি মাসের ৯ তারিখ ঝুঁকিপূর্ণ প্রসূতিদের পরীক্ষা করেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেরা। এরপরে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওই প্রসূতিকে ৬০ টাকার খাবারের প্যাকেট দেওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ জেলাতেই দোকানদারের কাছে লক্ষাধিক টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের।
বন্ধ্যত্বকরণের জন্য বা প্রসূতিকে পরীক্ষা করাতে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা ব্লক হাসপাতালেআনার জন্য বোঝানোর কাজটা করতে হয় আশাকর্মীদের। এর জন্য তাঁরা ভাতা পান। রাজ্যের আশা কর্মী সংগঠনের সম্পাদক ইসমত আরা খাতুনের অভিযোগ, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় নারী ও শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের সমস্ত কাজ তাঁদের করতে হলেও, শেষ তিন বছর ধরে ভাতা পাচ্ছেন অনিয়মিত। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যকে বললে তারা বলছে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। আর, দিল্লিতে গিয়ে কথা বললাম, ওরা বলছে সব টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই টানাপড়েনে আমরা যাব কোথায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy