Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Farmer

Farmer in West Bengal: চাষির অপমৃত্যুতে মেলে না টাকা, অভিযোগ বিধি-জটের

প্রশাসনের দাবি, রবি ও বোরো মরসুমে রাজ্যের ৭৬ লক্ষ চাষি ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’-তে নাম লিখিয়েছেন। সে বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ২২০০ কোটি টাকা।

মৃত গৌতম ঘোষ, হরিচরণ মালিক ও লিয়াকত আলি।

মৃত গৌতম ঘোষ, হরিচরণ মালিক ও লিয়াকত আলি। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:১২
Share: Save:

কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনকারী কৃষকদের মৃত্যুর তথ্য-পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই বলে কেন্দ্রীয় সরকার জানাতেই প্রতিবাদে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিজেপি-বিরোধী দলগুলি। অথচ পশ্চিমবঙ্গে চাষ করতে গিয়ে ক্ষতির কারণে কৃষকের মৃত্যু হলে তৃণমূলের সরকারই তা মানতে চায় না— অভিযোগ রাজ্যের বিরোধীদের। তাই ক্ষতিপূরণও মেলে না বলে জানাচ্ছেন মৃত কৃষকদের ক্ষুব্ধ পরিজনেরা।

রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এ রাজ্যে চাষের কারণে কোনও চাষির মৃত্যু হয় না। তিনি বলেন, “খরিফ (এপ্রিল থেকে অগস্ট ) এবং রবি ও বোরো (নভেম্বর-মার্চ) মরসুমের শুরুতেই চাষি থেকে ভাগচাষিরা ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’-তে সাহায্য পান। ‘কিসান ক্রেডিট কার্ড’ থেকেও চাষিরা কম সুদে ঋণ পান।’’

প্রশাসনের দাবি, রবি ও বোরো মরসুমে রাজ্যের ৭৬ লক্ষ চাষি ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’-তে নাম লিখিয়েছেন। সে বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ২২০০ কোটি টাকা। খরিফ মরসুমে চাষিদের ১৮৩৪ কোটি টাকা ‘সাহায্য’ দেওয়া হয়েছে। ৩৭ হাজারের কাছাকাছি চাষির পরিবার মৃত্যুকালীন (১৮ থেকে ৬০ বছর) দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। ভাগচাষিরাও শস্যবিমার সুযোগ পাচ্ছেন।

‘‘বাস্তব অন্য কথা বলছে’’, মন্তব্য বিরোধীদের। কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার দাবি করছেন, তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যের ২৪৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তার মধ্যে রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলারই ১৬৮ জন রয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ফসলের দাম নেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও সরকার কৃষকদের পাশে নেই। সরকারি সুবিধা পেতে নিয়মের ফাঁসে পড়ছেন চাষিরা।’’ সমস্যা যে কোথাও রয়েছে, প্রকারান্তরে সেই ইঙ্গিত মিলেছে রাজ্যের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী তথা তৃণমূলের কিসান-খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পূর্ণেন্দু বসুর মন্তব্যে। তাঁর কথায়, “এটা নিয়ে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো কিছু হয়নি। সব কি এক দিনে হয়? চলতে চলতে ঠিক হয়ে যাবে।’’

কী করে ঠিক হবে— প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগীরা। পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বাসিন্দা হরিচরণ মালিক চাষ করতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে আত্মঘাতী হন বলে দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী সান্ত্বনা মালিক। তাঁর দাবি, ‘‘স্বামী ভাগচাষি ছিলেন। দেনা করে চাষ করেছিলেন। চাষে ক্ষতি হওয়ায় আত্মহত্যা করেন।
তখন অনেকে এসেছিলেন। কিন্তু সরকারি সাহায্য পাইনি।’’ তিনি জানান, তাঁর দুই ছেলে স্কুলে পড়া বন্ধ করে চাষবাসেই নেমেছে।

ভাতারের কুবাজপুর গ্রামের অনিতা ঘোষ জানান, বছর চারেক আগে তাঁর স্বামী, পেশায় ভাগচাষি গৌতম ঘোষ সমবায়-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটা টাকার ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে জমিতে ধানগাছ ডুবে যাওয়ার আক্ষেপে তিনি আত্মহত্যা করেন। অনিতার কথায়, ‘‘সরকারি সাহায্য দূরের কথা, স্বামীর মৃত্যুর পরে কয়েক মাস ঋণের কিস্তিও মেটাতে হয়েছে।’’

কয়েক সপ্তাহ আগেই বাড়ির কাছে গাছে ঝুলন্ত দেহ মেলে গলসির লিয়াকত আলির। তিনিও চাষ সংক্রান্ত দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেন বলে তাঁর পরিবার ও পড়শিদের দাবি। লিয়াকতের ছেলে নাজিমুল দুর্ঘটনায় জখম হয়ে মাস ছয়েক ঘরে বসে রয়েছেন। তিনি জানান, সেই পরিস্থিতিতে বাদামি শোষক পোকার আক্রমণে ধানের ফলন কম হওয়ার চিন্তায় ছিলেন লিয়াকত। নাজিমুলের দাবি, “নিজস্ব অল্প জমির সঙ্গে আরও কিছুটা ভাগে বাবা ঋণ নিয়ে চাষ করেছিল। চাষের ক্ষতির আশঙ্কায় আত্মহত্যা করল। সরকারি অনুদান পাইনি।’’ স্বজন হারানো তিনটি পরিবারের দাবি, স্থানীয় কৃষি দফতরে অনুদান তথা সাহায্যের আবেদন করেছিলেন তাঁরা। লাভ হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত সহ-কৃষি অধিকর্তা (ভাতার) বিপ্লব প্রতিহার এবং গলসির সহ-কৃষি অধিকর্তা সরোজকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘নিয়মের মধ্যে থাকলে সবাই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, দেখতে হবে।’’

এই পরিস্থিতিতে পরিবারগুলির দাবি, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা না মেলায় চটজলদি টাকার জন্য মহাজন আর মাইক্রো-ফিনান্স সংস্থা তাঁদের ভরসা।

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Agricultutre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy