বিধ্বংসী: ২০১১-র আগুনে জ্বলছে ঢাকুরিয়া আমরি। —ফাইল চিত্র।
বেঁচে থাকলে প্রাকৃতা পালের বয়স হত ২৪ বছর। এত দিনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সফল হতেই পারত বাঁকুড়ার কোতুলপুরের মেয়েটার।
আমরি হাসপাতালের আগুনের বিষবাস্পে হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়ের বাবা ধনঞ্জয় পাল বৃহস্পতিবার সাফারি পার্কে এক দশক আগের বিপর্যয়ের নিহতদের স্মারক-বেদীর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ‘‘সামান্য দুর্ঘটনায় জখম মেয়েটাকে আর দু’-এক দিনেই ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। তার বদলে ২০১১-র ৯ ডিসেম্বর সকালেই ওর নিথর দেহটা ওয়ার্ড থেকে বেরোল,’’ দীর্ঘশ্বাস ছিটকে এল মানুষটার কাছ থেকে। এক দশকে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা অনেক কিছুই পাল্টেছে। মাথার চোটে সিটি স্ক্যান করাতে এখন হয়তো কোতুলপুর বা জয়রামবাটি থেকে কলকাতায় আসতে হত না! আরামবাগেই কিছু একটা বন্দোবস্ত হয়ে যেত।
কিন্তু ন্যায় বিচারের দীর্ঘসূত্রতার ছবিটা পাল্টায়নি। এত দিনেও হাসপাতালে আগুন নিয়ন্ত্রণে ‘গাফিলতির’ জেরে ৯৩ জনের মৃত্যুর সেই ঘটনায় বিচার পাননি মানুষগুলো। ধনঞ্জয়বাবু ৮ ডিসেম্বরের রাতে আমরির প্রতীক্ষা কক্ষেই ছিলেন। রাত আড়াইটে, তিনটে নাগাদ আগুন লাগা থেকেই তিনি সজাগ। রাতভর ছোটাছুটির সাক্ষী। এ দিন ক্ষুব্ধ স্বরে কন্যাহারা বাবা বলছিলেন, ‘‘আমি তো নিজেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। এত দিনে আদালতে আমারই সাক্ষী-পর্ব শুরু হয়নি।’’
আমরি-কাণ্ডের এক দশক পূর্তির দিনে এত বড় ঘটনার স্মারক বলতে শহরে সবেধন নীলমণি একটি বেদী। সেখানে মৃতদের গুটিকয়েক পরিজন জড়ো হয়েছিলেন। বাঘাযতীনের মৃদুলা গুহঠাকুরতার কন্যা পারমিতা গুহঠাকুরতা বলছিলেন, ‘‘মায়ের তখন ৬৩ বছর বয়স। সামান্য কিছু রুটিন পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এ ভাবে মারা যাবেন, কে জানত!’’ পারমিতারও ক্ষোভ, এত বড় দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ঘটনার পরেও দোষীদের তথা কর্তৃপক্ষের গায়ে আঁচড়টি পড়েনি। আমরির বড়-মেজ কর্তা-সহ ১৬ জন অভিযুক্ত এখন জামিনে। এখন মাসে মাসে আমরি-কাণ্ডের শুনানি চলে আলিপুর কোর্টে। তখন মৃতদের ময়না তদন্ত যিনি করেছিলেন, সেই চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহালির এখন সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জাড়া গ্রামের পুষ্পা দাসের ছেলে জয়দেব দাস, বেহালার জহরলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে রাজা গঙ্গোপাধ্যায়দের আক্ষেপ, এক দশকে তাঁদের বয়স বেড়ে গেল। অথচ কবে সাক্ষ্য নেওয়া হবে, কবেই বা বিচার-পর্ব শেষ হবে, তাঁরা অন্ধকারে!
আমরি-কাণ্ডের পরেই মৃতদের পরিজনের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ মিলেছিল সাকুল্যে তিন লক্ষ টাকা। মামলা করে বাকিরা কেউ কেউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কম-বেশি ৩০-৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। অনেকের মামলা আবার ঝুলেও আছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৌড়োদৌড়ি করে ক্লান্ত পরিজনেরা কেউ কেউ রণে ভঙ্গও দিচ্ছেন। তবু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। অকালমৃতা ক্লাস এইটের প্রাকৃতার বাবা ধনঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের মামলায় ঠিকঠাক টাকা পেলে মেয়ের নামে একটা হাসপাতাল করব গ্রামে। মেয়ের নাম করে গ্রামের গরিব লোকের সেবায় কিছু করা গেলে হয়তো ছিটেফোঁটা শান্তি পাব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy