ভাষাচর্চা: ডোমজুড়ে সন্তু দত্তের পরিবার।
অনেকে তাঁদের উন্মাদ ভাবেন, ঠাট্টা করেন। তাঁরা গায়ে মাখেন না। উল্টে নিজেদের দলে আরও লোক টানতে শহর জুড়ে নিখরচায় সংস্কৃতে কথা বলা শেখানোর শিবির আয়োজন করেন। নিজের মাতৃভাষার বদলে সংস্কৃতকেই প্রাত্যহিক যোগাযোগের ভাষা করে নিয়েছেন। এ রাজ্যে এমন কেশ কয়েকটি পরিবার রয়েছেন, যাঁরা এখন পুরোপুরি সংস্কৃতভাষী।
যেমন কেষ্টপুরে ২০ বছর ধরে বাস সংস্কৃতভাষী কর্নাটকি রাজু পরিবারের। হনুমন্ত রাজু ডিভিসি ইঞ্জিনিয়ার, স্ত্রী পুষ্পলতা। একমাত্র ছেলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। কন্নড় নয়, এখন তাঁদের মাতৃভাষা সংস্কৃত। বারাণসীর গাঁধী আশ্রমে স্বামী-স্ত্রী-ছেলে মিলে ১৪ দিনের সংস্কৃত বাক্যালাপের কোর্সও তাঁরা করে এসেছেন। তাঁদের ফ্ল্যাটে ‘মহোদয়া উপবিশতু’ বলে সম্ভাষণের পরে পুষ্পলতা নিয়ে এলেন ‘ রক্তবর্ণ চায়ম, শর্করা বিহায়’ (চিনি ছাড়া লিকার চা) এল, সঙ্গে সুপিষ্টকম (বিস্কুট)। দ্রুত ‘জঙ্গমবাণী’ (মোবাইল)-র মাধ্যমে হনুমন্ত যোগাযোগ করলেন ছেলের সঙ্গে।
হনুমন্ত স্ত্রীকে বললেন, ‘‘অদ্য কহঃ পাকহঃ? মম তু ইদানিম অতীব বুভুক্ষা।’ (আজ কী কী রান্না করেছ? খুব খিদে পেয়েছে)। এক গাল হেসে পুষ্পলতার জবাব, ‘‘ওদনম, স্যুপম, শাকম, দধিহি, অবলেহ, মধুরম!’’ অর্থাৎ ভাত, ডাল, শাক, দই, চাটনি আর মিষ্টি। এক বার স্বামী-স্ত্রী কেনাকাটা করতে বেরিয়েছেন। দোকানে একটা শাড়ি দেখে পুষ্পলতা একটু জোরেই বলেছেন, ‘‘এতাদৃশী শাটিকা মম সমীপে নাস্তি, শাটিকাম কৃনাতু।’’ (এ-রকম শাড়ি আমার নেই, কিনে দাও) দোকানদারের ভিরমি খাওয়ার দশা।এ বলে কী!
ভাষাচর্চা: কেষ্টপুরে হনুমন্ত রাজুর পরিবার।
রাজু পরিবারের মতোই ডোমজুড়ের সন্তু দত্ত এবং তাঁর স্ত্রী নিবেদিতা দত্ত। সন্তুবাবু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অঙ্কের অধ্যাপক। হেসে বলেন, ‘‘দুর্দান্ত কিছু প্রতিশব্দ রয়েছে সংস্কৃতে। যেমন—দণ্ডদীপঃ (টিউবলাইট), শীতোদকম (ফ্রিজ), সঙ্গনকম (কম্পিউটর), দিনদর্শিকা (ক্যালেন্ডার), প্রক্ষালয়া যন্ত্রম (ওয়াশিং মেশিন),গণকযন্ত্রম (ক্যালকুলেটর), উন্নয়নি (লিফট), চশকহা (গ্লাস) এবং এই রকম আরও কত!’’
তালিকায় রয়েছেন বরাহনগরের বাসিন্দা তিন বোন— কৃষ্ণপ্রিয়া হাতি, হরপ্রিয়া হাতি, বিষ্ণুপ্রিয়া হাতি। তিন জনই সংস্কৃত ভাষার ছাত্রী। তাঁদের পরিবারে সংস্কৃত ছাড়া অন্য কোনও ভাষা একেবারেই চলে না।
মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের ফাঁসিতলা পল্লির দে পরিবারের সংস্কৃতে কথোপকথনের সূত্রপাত মেয়ে প্রেরণায় অনুপ্রেরণাতেই। সে এখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিন বাবা গৌতম দে অফিস থেকে বাড়ি ফিরলেই চায়ের টেবিলে শুরু হয় বাবা-মা-মেয়ের তুমুল সংস্কৃত আড্ডা।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy