গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার জাতীয় স্তরেই প্রকাশ করা হয়। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি চায় দেশের সব রাজ্যের জন্যই দলের প্রতিশ্রুতি থাকুক। সে জন্য রাজ্যে রাজ্যে ইস্তাহার কমিটিও তৈরি করেছে পদ্মশিবির। পশ্চিমবঙ্গেও হয়েছে বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ির নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট কমিটি। ঘটনাচক্রে, সেই কমিটির অন্যতম সদস্য এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল।
২০২২ সালের শেষ দিকে সিবিআই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে গ্রেফতার করেছিল এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে। গ্রেফতারের সময়ে তিনি ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সেই সময়েই অভিযোগ ওঠে, সুবীরেশ এসএসসি-র চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেওয়ার আগে নিয়ম ভেঙে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর পূর্বসূরিদের। এক বার নয়। দু’বার ঘটেছিল এমন ঘটনা। সত্য জানতে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল এবং প্রদীপকুমার শূরকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠায় সিবিআই।
তবে চিত্তরঞ্জন এসএসসি দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত নন। বরং, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই তদন্তে গ্রেফতার হওয়ার আগেই চিত্তরঞ্জন জানিয়েছিলেন, তৃণমূল নেতাদের কাছের লোকেদের চাকরি দেওয়ার জন্য তাঁকে অনেক ‘চাপ’-এর মুখে কাজ করতে হয়েছে। রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠনের পরে তিনিই প্রথম এসএসসি-র চেয়ারম্যান পদে বসেন। ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকার পরে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। ‘চাপ’-এর জন্যই পদত্যাগ বলেও দাবি করেছিলেন চিত্তরঞ্জন।
একদা তৃণমূলের শিক্ষা সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিত্তরঞ্জন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগ দিলেও তিনি খবরে আসেন ২০২২ সালে সিবিআইয়ের ডাকে নিজাম প্যালেসে হাজিরার পরে। বিজেপিতে যোগ দিলেও তাঁকে অবশ্য সে ভাবে কোনও দায়িত্ব দেয়নি পদ্মশিবির। গত বিধানসভা নির্বাচনেও আড়ালেই ছিলেন। এ বার অবশ্য তিনি সরাসরি দলের কাজ করছেন। মঙ্গলবারই লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারের জন্য তৈরি প্রথম কমিটিতে যোগ দেন চিত্তরঞ্জন। বিজেপির জাতীয় স্তরের ইস্তাহারে বাংলার জন্য কী কী চান এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান? আনন্দবাজার অনলাইনকে চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘আমি মনে করি না যে, সরকারি চাকরিই একমাত্র কর্মসংস্থান হতে পারে। আমাদের রাজ্য বা আমাদের দেশ নয়, এটা গোটা বিশ্বের জন্যই সত্যি। তবে চাকরির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা খুব জরুরি। লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে কয়েক হাজারের চাকরি হয়। এটাই নিয়ম। যোগ্যরা সুযোগ পেলে বাকিদের দুঃখ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অযোগ্যরা চাকরি পেয়ে গেলে যোগ্যদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। এটা বন্ধ করা দরকার।’’ চাকরির ক্ষেত্রে যাতে স্বচ্ছতা থাকে সে ব্যাপারে কি উল্লেখ থাকবে বিজেপির ইস্তাহারে? চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘সেটা আমি বলতে পারব না। কী থাকবে, কী থাকবে না সেটা আলোচনার মধ্যে দিয়েই ঠিক হবে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের মূল বাসিন্দা হলেও চিত্তরঞ্জন এখন থাকেন কলকাতায়। লেখাপড়া দেশে এবং দেশের বাইরেও। গবেষণা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চাকরি যাদবপুরে। অনেক আগে থেকেই পরিচয় ছিল বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়ের সঙ্গে। সেই সুবাদেই চাকরি ছাড়ার পরে বিজেপিতে যোগদান। তার পরে এই প্রথম বার বড় কোনও দায়িত্ব পেয়েছেন। চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘আমি বিদেশে গিয়েও দেখেছি বাংলার মেধার গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের এখানে সরকারি শিক্ষামাধ্যমের তুলনায় বেসরকারি ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা মেধার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও পড়ানোর ক্ষেত্রে নানা সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকেন। আমি চেয়েছিলাম, মেধার ব্যবহার করে বেসরকারি ক্ষেত্রকে চ্যালেঞ্জ করবে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু তাতেই বাধা পাই।’’
কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতি কি পরিস্থিতিতে কোনও বদল আনতে পারবে? চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘শিক্ষানীতি খুব ভাল। কিন্তু তা কার্যকর করার জন্য যে পরিকাঠামো দরকার তার অভাব রয়েছে। সেটা সবচেয়ে আগে দরকার।’’
তৃণমূল জমানায় শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে অনেক কথা বললেও বিজেপির সম্ভাব্য ইস্তাহার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি বা ইঙ্গিতও দেননি চিত্তরঞ্জন। তবে মনে করালেন, কোন পরিস্থিতিতে তাঁকে এসএসসি-র চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন জানান, তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা অনেক সময় গাড়িচালকের হাতেও তালিকা পাঠিয়ে দিতেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্যাডের পর প্যাড, নাম, সই। বড় বড় নেতানেত্রীরা গাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপ ছিল।’’ কেন দিতে হয়েছিল ইস্তফা? চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘এক দিন মাননীয় শ্রীপার্থ চট্টোপাধ্যায় ডাকলেন। আমি দেখা করলাম। উনি চাকরি ছেড়ে দিতে বললেন। তখন তিনি তৃণমূলের মহাসচিব এবং মন্ত্রী। দোর্দণ্ডপ্রতাপ। সহজ ভাবেই বলতে পারতেন। কিন্ত তা না করে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন। খুব খারাপ লেগেছিল। সেই দুঃখ নিয়েই আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’ পদত্যাগের কথা বলতে গিয়ে চিত্তরঞ্জন আরও বলেন, ‘‘আমি যে ইস্তফা দিয়েছিলাম, তাতে কোনও কারণ দর্শাইনি। কিন্তু তার জন্য আমার ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। বলা হয়নি, তুমি এটা লিখে দাও। কারণ, তখন এত তাড়া ছিল যে, তাড়াতাড়ি চলে গেলে আপদ বিদায় হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy