Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

‘হাতেপায়ে ধরেও এলেন না ডাক্তার’

রবিবার ভোরে কিশোর দাস (৩৪) নামে রোগীর মৃত্যুর পরে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে রোগীর পরিবার বিক্ষোভ দেখান হাসপাতালে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

কিশোর দাস।

কিশোর দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২২
Share: Save:

জ্বর, বমির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর ক্রমাগত হেঁচকি উঠছিল। কিন্তু পরিজনেরা হাতে-পায়ে ধরলেও জরুরি বিভাগের ডাক্তার রোগীকে দেখতে যাননি বলে অভিযোগ। রোগীর পরিবারের দাবি, ডাক্তারকে বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি ‘ব্যস্ত’ ছিলেন। কাঠমিস্ত্রির কাজ করা পরিবারটির কথায়, ডাক্তার ‘টিভি দেখছিলেন’। ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমানের কালনা হাসপাতাল। সেখানে অবশ্য কোনও টি‌ভি নেই। হাসপাতালে উপস্থিত কারও কারও মতে, ডাক্তার খুব সম্ভবত কম্পিউটারে চোখ রেখেছিলেন।

রবিবার ভোরে কিশোর দাস (৩৪) নামে রোগীর মৃত্যুর পরে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে রোগীর পরিবার বিক্ষোভ দেখান হাসপাতালে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণবকুমার রায় বলেন, ‘‘উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি দল এ ব্যাপারে সোমবার তদন্তে যাচ্ছে কালনা হাসপাতালে। তারা সরাসরি আমাকে রিপোর্ট দেবে।’’

রবিবার রাত পর্যন্ত রোগীর পরিবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই বলেন, ‘‘ওই রোগীর মৃত্যু ও তাকে কেন্দ্র করে অভিযোগ-বিক্ষোভের কথা কানে এসেছে। লিখিত অভিযোগ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বোর্ড বসিয়ে ঘটনার তদন্ত করবে।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ডাক্তারের গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে আত্মীয়েরা বিক্ষোভ করছিলেন। হাসপাতালের ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।’’

মেমারির আমাদপুরের বাসিন্দা, পেশায় কাঠমিস্ত্রি কিশোরবাবুকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। তাঁর স্ত্রী সোমা দাসের দাবি, শনিবার রাত ১০টা নাগাদ স্বামীর ক্রমাগত হেঁচকি উঠছে দেখে এক নার্সের পরামর্শে জরুরি বিভাগের এক ডাক্তারের কাছে যান তিনি। বার বার অনুরোধ করা হলেও সেই ডাক্তার রোগীকে দেখতে আসেননি। শুধু ওষুধ ও ইঞ্জেকশন লিখে দেন।

রাত ২টো নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন সোমাদেবীর বাবা কৃষ্ণ মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘জামাইয়ের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। বারবার ওই ডাক্তারের পায়ে-হাতে ধরে বলি, ‘এক বার দেখবেন চলুন’। উনি আসেননি। পাশেই টিকিট কাউন্টারে বসে টিভি দেখতে ব্যস্ত ছিলেন।’’ যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে কোনও টেলিভিশন সেট নেই। তবে টিকিট কাউন্টারে ইন্টারনেট সংযোগ-সহ কম্পিউটার রয়েছে।

রোগীর পরিবারের কথায়, ভোরের দিকে অন্য এক ডাক্তার কিশোরবাবুকে দেখতে যান। ভোর ৪টে ২০ মিনিটে কিশোরবাবু মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। মৃতের শ্বশুর জানান, দাহ-সহ অন্য কাজে এ দিন ব্যস্ত থাকায়, তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যার জন্য জামাই চলে গেল, সেই ডাক্তারের শাস্তি চাই। সোমবার হাসপাতাল সুপার, মহকুমাশাসক ও কালনা থানায় অভিযোগ দায়ের করব।’’ বহু চেষ্টাতেও সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি মেসেজের।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Hospital Medical Negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy