Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বন্ধুপ্রকাশের মোবাইল ফোনটিই ‘প্রাণ ভোমরা!’, খুঁজেই চলেছে পুলিশ

বন্ধুপ্রকাশ তাঁর স্ত্রী বিউটি আর বছর ছয়েকের ছেলে অঙ্গনকে খুন করতে উৎপলের সময় লেগেছিল সাকুল্যে মিনিট পাঁচেক। এমনই দাবি ছিল পুলিশের।

নিহত বন্ধুপ্রকাশ পাল। —ফাইল চিত্র

নিহত বন্ধুপ্রকাশ পাল। —ফাইল চিত্র

মৃন্ময় সরকার
জিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

তদন্তে নেমে পুলিশের ইঙ্গিত ছিল, খুনের খুঁটিনাটি জানতে বন্ধুপ্রকাশ পালের মোবাইল ফোনটিই ‘প্রাণ ভোমরা!’ সিআইডি’র কর্তারাও জানিয়ে গিয়েছিলেন— অনেক কুয়াশাই কেটে যাবে নিহত শিক্ষকের মোবাইল ফোনটি পাওয়া গেলে।

তবে, জিয়াগঞ্জে স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল সপরিবার খুন হওয়ার পরে পনেরো দিন কেটে গেলেও সে ফোনের কোনও হদিস পায়নি পুলিশ।

ওই খুনে মূল অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ যাকে গ্রেফতার করেছে, সাহাপুর গ্রামের সেই রাজমিস্ত্রি উৎপল বেহেরা জেরায় জানিয়েছে, ফোন তার কাছে নেই। তদন্তকারীদেরও ধারনা, বন্ধুপ্রকাশের ফোন উৎপল নেয়নি। তা হলে? উত্তর মেলেনি।

বন্ধুপ্রকাশ তাঁর স্ত্রী বিউটি আর বছর ছয়েকের ছেলে অঙ্গনকে খুন করতে উৎপলের সময় লেগেছিল সাকুল্যে মিনিট পাঁচেক। এমনই দাবি ছিল পুলিশের। রামদার কোপ ছাড়া অন্য কোনও অস্ত্রের ব্যবহারও দেখেনি পুলিশ। তবে তা নিয়ে সংশয় ছিল পুলিশেরই একাংশের মধ্যে।

সিআইডি কর্তাদের একাংশও সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এমনকি খোদ মুখ্যমন্ত্রীও প্রচ্ছন্ন সন্দেহ রেখেছেন— উৎপলের একার পক্ষে ওই ভাবে খুন করা সম্ভব? সম্ভব-অসম্ভবের সেই প্রশ্ন তুলে রাখলেও, এ কথা ঠিক, বন্ধুপ্রকাশের ফোন হাতে পেলে অনেক তথ্যই হাতে আসত পুলিশের।

এখন প্রশ্ন উৎপল ওই ফোন না নিলে কে নিল সেই ফোন? কিছু আড়াল করতেই কি ফোনটি উধাও করে দিল কেউ?

উৎপল যখন ওই বাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তখনই সেখানে পৌঁছেছিল দুধওয়ালা রাজীব দাস। ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়ে সে ফোন করে বসেছিল বন্ধুপ্রকাশের ফোনেই। পুলিশের জেরায় রাজীব জানিয়েছিলেন, ফোনটি বেজেও ছিল। তা হলে তা গেল কোথায়?

টাওয়ার লোকেশনে পুলিশ সেই ফোনের শেষ হদিস কোথায় পেয়েছে তা নিয়েও মুখ খুলতে চায়নি। সেই সূত্র ধরে কত দূর এগোনো গেল সে ব্যাপারেও পুলিশের মুখে কুলুপ।

মঙ্গলবার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) তন্ময় সরকার বলেন, ‘‘ফোনের কথা উৎপল অস্বীকার করেছে। সে বলছে সে ফোন নেয়নি। আমরা ফোনটির খোঁজে এখনও তল্লাশি চালাচ্ছি।’’

সিআইডির এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘খুনের ঘটনার পরে পুলিশ আসার আগে পাড়া-পড়শিদের অনেকেই ঢুকেছিল, তাদের কেউ নিতে পারে। কারণ উৎপল যে পরিস্থিতিতে খুন করেছে, তার পক্ষে ফোন চুরি করা সম্ভব নয়।’’

সিআইডির ওই আধিকারিক জানান, দশমীর দিন সকাল ১০.৩৬ মিনিটে উৎপল বন্ধু প্রকাশকে ফোন করে এবং ১০.৫৩ মিনিট থেকে দুপুর ১.৫২ পর্যন্ত উৎপলের ফোনের লোকেশন ছিল জিয়াগঞ্জ সদরঘাট। তবে, তার পর থেকেই ওই ফোনের কোনও হদিস পায়নি পুলিশ।

জেরায় উৎপল জানিয়েছে, বন্ধুপ্রকাশকে খুনের সিদ্ধান্ত সে চতুর্থীর দিন নিয়েছিল। সেই মতো বাড়ির কাছেই এক কামারকে বরাত দিয়ে ইস্পাতের রামদা বানিয়েছিল সে। কামারকে সে জানায়, বাড়ির বিভিন্ন কাজের জন্যই রামদা তৈরি করাচ্ছে সে। তার জন্য ৯০০ টাকাও খরচ করেছিল সে।

তন্ময় সরকার বলছেন, ‘‘প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জেরায় সত্যি কথা স্বীকার করে উৎপল, জানায় ওই রামদা সাহাপুর থেকে বরাত দিয়েই বানায় সে।’’

এ দিকে, ওই ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি সাগরদিঘির সাহাপুর গ্রামে। আতঙ্কিত গ্রামের মানুষ ওই এলাকায় একটা পুলিশ ফাঁড়ির আবেদন জানিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Jiaganj Jiaganj Murder Crime Police CID
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy