পেট্রোলের সঙ্গে মিশছে ইথানল। সঙ্গে হাজির জলও। সেই ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল ও জলের ত্র্যহস্পর্শে মোটরবাইক, গাড়ির ইঞ্জিনের নিয়মিত ক্ষতি হচ্ছে বলে রাজ্যের পেট্রোল পাম্প ডিলারদের আশঙ্কা। তাঁদের সংগঠন এর সুরাহা চেয়ে রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে। তেল সংস্থাগুলি অবশ্য হাত তুলে দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য— সিদ্ধান্তটি খোদ কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ম মন্ত্রকের। এখানে সংস্থার কিছু করার নেই।
কার্বন মনোক্সাইডের দূষণ প্রতিরোধে লিটারপিছু ১০% ইথানল মেশানো পেট্রোল সরবরাহ করাটাই এখন দস্তুর। কিন্তু তাতে জল আসছে কোথা থেকে?
রাজ্য পেট্রোল পাম্প ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষার সেনের ব্যাখ্যা, ‘‘এ রাজ্যে আবহাওয়া মূলত আর্দ্র। পেট্রোল ট্যাঙ্কের ফাঁকা অংশে সহজে জলীয় বাষ্প জমে যায়।’’ এবং সেই ‘ওয়াটার ভেপার’ ইথানল মিশ্রিত পেট্রোলের সংস্পর্শে এলে গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষতি হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা তো বটেই, ইঞ্জিনের স্থায়িত্বও কমে যেতে পারে বলে তুষারবাবুদের দাবি। অ্যসোসিয়েশনের অভিযোগ, এ ব্যাপারে গ্রাহকদের সতর্ক করা হয়নি। ‘‘পেট্রোলের সঙ্গে যে ইথানল মেশানো হচ্ছে, তা বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো জরুরি ছিল। মানুষ হুঁশিয়ার হতে পারতেন। তা না-করেই পাম্পকে ইথানল মেশানো পেট্রোল বেচতে বাধ্য করা হচ্ছে।’’— আক্ষেপ তুষারবাবুর। ওঁদের বক্তব্য: তেল কোম্পানিদের বারবার বলেও লাভ না-হওয়ায় অ্যাসোসিয়েশন ক্রেতা-সুরক্ষার হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন তেলসংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকে ক’দিন আগে বৈঠক করেন রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সম্পাদকও হাজির ছিলেন। তেলসংস্থার তরফে বৈঠকে যুক্তি দেওয়া হয়, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনেই পেট্রোলে ইথানল মেশানো হচ্ছে। মন্ত্রী তাদের থেকে লিখিত বক্তব্য চেয়েছিলেন। সাধনবাবু বলেন, কোম্পানিগুলি সম্প্রতি তাঁকে লিখিত ভাবে জানিয়েছে, রাজ্যের পাম্পগুলোর অভিযোগ কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষতি হলে তো গাড়ির মালিকেরা অভিযোগ করবেন! তেমন কোনও অভিযোগ ক্রেতা-সুরক্ষায় জমা পড়েনি। তা হলে কী ভাবে বোঝা গেল যে, ইঞ্জিনের ক্ষতি হচ্ছে?
সাধনবাবুর জবাব, ‘‘পেট্রোলে যে ইথানল মিশছে, এটাই তো ক্রেতারা জানেন না! তাই ওঁরা বুঝতে পারছেন না, ইঞ্জিনের ক্ষতি কী ভাবে, কতটা হচ্ছে।’’ মন্ত্রীর বক্তব্য: পেট্রোলে কী মেশানো হচ্ছে, তেল কোম্পানির তরফে সেটা খোলসা করা জরুরি। ‘‘প্রতিটা পাম্পে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের জানাতে হবে, পেট্রোলের সঙ্গে ইথানল মেশানো হচ্ছে।’’— পর্যবেক্ষণ সাধনবাবুর।
দেশের অন্যতম তেলসংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েলের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ইথানল মেশানো পেট্রোলে জল থাকার কথা নয়। তা হলে এখানে জল আসছে কী ভাবে?
তুষারবাবুর যুক্তি: এ রাজ্যে অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প বহু পুরনো। ভূগর্ভের ট্যাঙ্কে (যেখানে পেট্রোল থাকে) বিস্তর জল দীর্ঘ দিন ধরে জমে রয়েছে। তার উপরেই পেট্রোল ঢালা হয়। আবার আর্দ্রতার দরুণ গাড়ির তেল-ট্যাঙ্কের ফাঁকা অংশে জলীয় বাষ্প জমে। কখনও বৃষ্টির জল ঢুকে যায়। ইথানল মেশানো থাকায় পেট্রোল সহজে জমা জলে মিশে যায়। তাতেই ইঞ্জিনের দফারফা হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের এক অধ্যাপকেরও অভিমত, পেট্রোলের সঙ্গে যাতে জল না মেশে, সে বিষয়ে সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, আর্দ্র পরিবেশে তাতে গাড়ির ইঞ্জিনের সমূহ ক্ষতি হতে পারে। জোলো-সমস্যা সমাধানের পথ কি তেল কোম্পানিরা খুঁজেছে?
ইন্ডিয়ান অয়েলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (রিটেল সেল) অতীশ ঘোষের জবাব, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে রাজ্যের পেসব ট্রোল পাম্পের ট্যাঙ্ক জলমুক্ত করার নোটিস দিয়েছি।’’ তবে ক্রেতাসাধারণের অবগতির স্বার্থে পাম্পে কোনও বিজ্ঞাপন যে দেওয়া হয়নি, সংস্থাগুলি তা স্বীকার করছে। যদিও তাদের দাবি: কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে অন্যান্য রাজ্যেও ইথানল মেশানো পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু অন্য কোথাও কোনও অভিযোগ ওঠেনি। যা শুনে সাধনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যের পরিবেশে ফারাক রয়েছে। সেটা মাথায় রেখেই পেট্রোলে মিশ্রণ করা দরকার।’’
আর সেটা ক্রেতাদের জানিয়েই হওয়া উচিত বলে মন্ত্রী মনে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy