ভোটার কার্ডের ‘নম্বর বিভ্রাট’ বা ভোটার তালিকায় ‘ভুয়ো’ নাম নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে শোরগোল শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। শাসক থেকে বিরোধী—এ রাজ্যে সকলেই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন পদ্ধতি কার্যকর করার বার্তা দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সূত্রের দাবি, সোমবার জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে কমিশনের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিয়েছেন, একই নম্বরের ভোটার কার্ড খুঁজে বার করে জেলাস্তরেই তা সংশোধন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে তার ঝক্কি সামলাতে হবে না ভোটারকে। একই সঙ্গে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে ভোটার তালিকার যাবতীয় পদ্ধতি বুঝিয়ে বলতেও হবে জেলা কর্তাদের।
সূত্রের দাবি, এ দিন মুখ্য নির্বাচনী কার্যালয় জেলা-কর্তাদের যে বার্তা দিয়েছে, তাতে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারেরা (ইআরও, তাঁরা সাধারণত অতিরিক্ত জেলাশাসক স্তরের অফিসার হন) এই কাজের দায়িত্ব সামলাবেন। প্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশেষ মাধ্যম তৈরি করছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন, তাতে গোটা দেশের ভোটারের তথ্য থাকবে। একটি বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকেন এক জন ইআরও। সেই কেন্দ্রে যত ভোটার রয়েছেন, তাঁদের ভোটার কার্ডের নম্বর সেই মাধ্যমে নথিবদ্ধ করলে নির্দিষ্ট প্রযুক্তি জানিয়ে দেবে, গোটা দেশে একই নম্বরের অন্য কোনও ভোটার কার্ড রয়েছে কি না। যদি তা ধরা পড়ে, সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনই দায়িত্ব নিয়ে সেই কার্ড সংশোধন করাবে। নতুন ভোটার কার্ড তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট ভোটারের বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হবে ডাক-মারফত। তাতে ভোটারকে নিজের কার্ড সংশোধন করার জন্য দৌড়োদৌড়ি করতে হবে না। এ ছাড়া নতুন নাম তোলা এবং মৃত বা অযোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্ক থাকার বার্তাও দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনগুলিকে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এমন ঘটনা হাতেগোনা হবে। ফলে অভিযোগ পেলে সেটা এ ভাবেই খতিয়ে দেখা সম্ভব। অন্য কোনও রাজ্যের ভোটার কার্ডের তথ্য আমরা দেখতে না পেলেও, তথ্যভান্ডার জানিয়ে দেবে একই নম্বরে দেশের কোনও প্রান্তে অন্য কোনও কার্ড রয়েছে কি না।” কমিশনের এক কর্তা বলেন, “শীঘ্রই এই পদ্ধতি কার্যকর করবে দিল্লির নির্বাচন সদন। তখন প্রশিক্ষণ দিয়ে গোটা বিষয়টা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”
কমিশনের নির্দেশ—আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। একটি বৈঠক করবেন ইআরও-রা। আর একটি বৈঠক করবেন জেলাশাসকেরা। সেই বৈঠকে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতি পুনরায় সবিস্তারে জানানো হবে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। কত কাজ বাকি রয়েছে সে তথ্যও তাঁদের দেওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলির কোনও অভিযোগ থেকে থাকলে, তা নথিবদ্ধ করবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। এলাকাভিত্তিক ভাবে একই নম্বরের একাধিক ভোটার কার্ডের অভিযোগ থাকলে, তা নথিবদ্ধ করে পাঠাতে হবে কমিশনকে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, এই গোটা পদ্ধতিতে বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই বিএলএ-দের (বুথ লেভেল এজেন্ট, নিযুক্ত হন রাজনৈতিক দলগুলি থেকে) ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তাঁদের নিয়মিত সব তথ্যই দেওয়া হয়। তবু চলতি বিতর্কের পরে ফের সেই ভূমিকা রাজনৈতিক দলগুলিকে মনে করিয়ে দেওয়া হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)