গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আর লোকজনের ছোটাছুটি দেখেই সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিক মণীশরঞ্জন মিশ্র। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে কাছেপিঠে থাকা পর্যটকদের মাটিতে শুয়ে পড়তে বলেছিলেন তিনি। অন্যদের সতর্ক করতে কিছুটা এগিয়েও যান। তখনই জঙ্গিদের গুলি এসে বেঁধে মাথায়। তাতেই মৃত্যু হয় পুরুলিয়ার ঝালদার পুরনো বাঘমুণ্ডি রোডের বাসিন্দা মণীশের।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হানার ঠিক এক সপ্তাহ পরে, মঙ্গলবার ঝালদার বাড়িতে আসা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) গোয়েন্দাদের এমন বর্ণনা দিয়েছেন মণীশের স্ত্রী জয়া ও ছেলে সায়ন। গোয়েন্দারা চলে যেতে সংবাদমাধ্যমকে ওই কথোপকথনের বিষয়টি জানান মণীশের মেজোভাই রাহুলরঞ্জন মিশ্র।
জঙ্গি হানায় নিহত হন মণীশ-সহ রাজ্যের তিন জন। ইতিমধ্যে এনআইএ-র গোয়েন্দারা কলকাতার বিতান অধিকারী ও সমীর গুহের স্ত্রীর কাছে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে পৌনে ৫টা নাগাদ তিন গোয়েন্দা আধিকারিক মণীশের বাড়িতে আসেন। তাঁরা প্রথমে মণীশের ১৩ বছরের ছেলের সঙ্গে কথা বলেন।
রাহুল বলেন, ‘‘ভাইপো কী দেখেছে, গোয়েন্দারা জানতে চেয়েছিলেন। জঙ্গিরা ক’জন ছিল, কোন দিক থেকে এসেছিল, তাদের কারও মুখ মনে আছে কি না, এ সব জানতে চাওয়া হয়। জঙ্গিদের মুখের আঁকা ছবি দেখিয়ে তাদের কাউকে ও চিনতে পারছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। ভাইপো জানিয়েছে, দাদা (মণীশ) গাছতলায় দাঁড়িয়েছিল। বৌদি (জয়া) ছিল কিছুটা দূরে। ওরা দুই ভাই-বোন খেলছিল। হঠাৎ ওদের শুয়ে পড়তে বলে দাদা দৌড় দেয় অন্যদের সাবধান করতে। তার পরেই গুলি। নিমেষে সব শেষ!’’
সূত্রের দাবি, গোয়েন্দারা এর পরে জয়ার সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু জয়া অসুস্থ থাকায় পরিবারের লোকেরা মৃদু আপত্তি জানান। গোয়েন্দারা জানান, তদন্তের স্বার্থেই অল্প সময়ের জন্য তাঁরা জয়াকে কিছু প্রশ্ন করতে চান। এর পরে পরিবারের লোকেরা রাজি হন। রাহুলের কথায়, ‘‘গোয়েন্দাদের বৌদি একই কথা জানান। তাঁরা বৌদির বয়ান রেকর্ড করেন। তাঁরা বাড়িতে পৌনে দু’ঘণ্টা ছিলেন।’’ তবে গোয়েন্দারা সংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করতে চাননি।
মণীশের বাবা প্রাক্তন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঙ্গলেশ মিশ্র বলেন, ‘‘জঙ্গিদের হুঁশিয়ারি দেওয়া, সতর্ক করা অনেক হয়েছে। এ সব বন্ধ হোক। কত জনকে আর মরতে হবে? আমি বিচার চাই। তাই নাতি ও বৌমা যথাসাধ্য গোয়েন্দাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)