ইডির চার্জশিট বলছে, শুধু ২০১২ এবং ২০১৪ সালের টেট নয়, পুর দুর্নীতিতেও হাত পাকিয়েছিলেন অয়ন। ফাইল চিত্র ।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডির দাবি, তদন্ত চলাকালীন প্রতি দিনই নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারী আধিকারিকদের হাতে। সে সব তথ্য চার্জশিট আকারে আদালতে জমা দেওয়া হচ্ছে। সোমবারও নগর দায়রা আদালতে নতুন চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, নিয়োগকাণ্ডে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অয়ন শীলের নামে একগুচ্ছ অভিযোগের উল্লেখ রয়েছে সেই চার্জশিটে। রয়েছে শান্তনু-অয়নের ‘কুকীর্তি’র খতিয়ানও।
আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে ইডি দাবি করেছে, নামে-বেনামে মোট ১৪টি সম্পত্তি রয়েছে শান্তনুর। ৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪৭ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। পাশাপাশি বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার কর্মচারী থেকে একাধিক সঙ্গীর নামেও সম্পত্তি থাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে চার্জশিটে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
ইডি আধিকারিকদের দাবি, শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একটি তালিকা উদ্ধার হয়েছিল। সেই তালিকায় রাজ্যের ১৭টি জেলার ৩৪৬ জন প্রার্থীর নাম রয়েছে। যার মধ্যে অন্তত ১০ জন অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে চার্জশিটে দাবি করেছে ইডি।
ইডি চার্জশিটে আরও উল্লেখ করেছে, ২৬ জন প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ১ কোটি ৩৯ লক্ষ পেয়েছিলেন শান্তনু। পরে বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সেই কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা হয় বলে ইডির অভিযোগ। চার্জশিটে শান্তনু এবং তাঁর স্ত্রীর সংস্থার বিরুদ্ধে ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগও এনেছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, শান্তনুর স্ত্রীর সংস্থা থেকে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি কিনেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। কিন্তু পরে তাঁকে সেই জমি দেওয়া হয়নি। ফেরত দেওয়া হয়নি জমা করা ৪০ লক্ষও।
আদালতে ইডির জমা দেওয়া চার্জশিটে ধৃত অয়নের বিরুদ্ধেও একগুচ্ছ অভিযোগ এনেছেন ইডি আধিকারিকেরা। ইডির দাবি, শান্তনুকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ২০১২ এবং ২০১৪ সালের টেট-এ চাকরি দেওয়ার নামে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন অয়ন। পরে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দিতে অয়ন হুগলির বলাগড়ের ধৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ এবং পার্থ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়কে টাকা দিয়েছিলেন বলেও ইডির দাবি।
ইডির চার্জশিট বলছে, শুধু ২০১২ এবং ২০১৪ সালের টেট নয়, পুর দুর্নীতিতেও হাত পাকিয়েছিলেন অয়ন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জমা দেওয়া চার্জশিট অনুযায়ী, উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুরসভায় অনেক অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন অয়ন। তাঁর বিরুদ্ধে ১০০০ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা তোলার অভিযোগও আনা হয়েছে। ইডির দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের থেকে নেওয়া ৪৫ কোটির মধ্যে ১৮ কোটি টাকা নিজের ব্যবসার কাজে লাগিয়েছিলেন অয়ন। ২৬ কোটি দিয়েছিলেন পার্থ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সন্তুকে। ৬০ লক্ষ দিয়েছিলেন কুন্তলকে। অয়ন কুন্তলের মাধ্যমে ১০ জনের চাকরি করিয়েছিলেন বলেও চার্জশিটে দাবি করেছে ইডি।
তদন্তে জানা গিয়েছে, পরিবারের সদস্য, বন্ধু এবং কর্মচারীদের নথি ব্যবহার করে ৫০টির বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন অয়ন। তবে টাকার হিসাব রাখতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলেন নিজের কাছেই।
ইডি আধিকারিকদের দাবি, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার কারণে বাড়ি ছেড়েছিলেন অয়ন-ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তী। এর পর শ্বেতাকে থাকার জন্য চুঁচুড়ার ফ্ল্যাট ব্যবহার করতে দেন অয়ন। ইডি চার্জশিটে দাবি করেছে, ওই ফ্ল্যাট শ্বেতাকে উপহার দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শ্বেতার বয়ানে সেই কথা উঠে এসেছে বলে ইডি আধিকারিকদের দাবি। ইডি চার্জশিটে এ-ও দাবি করেছে, অয়ন-পুত্রের সঙ্গে ‘বান্ধবী’ ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিয়ে দিতে আগ্রহী ছিলেন ইমনের বাবা।
নগর দায়রা আদালতে ইডির জমা দেওয়া চার্জশিটে শান্তনু এবং কুন্তলের যোগ থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন ইডি আধিকারিকেরা। ইডি আধিকারিকদের দাবি, রাজনৈতিক সুবিধা পেতে শান্তনুকে ১ কোটি দিয়েছিলেন কুন্তল। কুন্তল এবং তাঁর সঙ্গীরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নমুনা ওএমআর শিট চাকরিপ্রার্থীদের কাছে পাঠিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছে ইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy