Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Ration Distribution Case

‘বালু-বান্ধব’ বাকিবুরের প্রযোজিত ছবিতে পার্থ-বান্ধবী অর্পিতা? খোঁজ নিচ্ছে ইডি

ইডি সূত্রের খবর, সিনেমায় টলিউডের বেশ কয়েক জন অভিনেতা কাজ করেন। সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায় বলিউডের এক শিল্পীকেও। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

ED sources said illegal money invested to produce a cinema by Bakibur Rahaman in Ration distribution case

বাকিবুর রহমান (বাঁ দিকে) এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৭
Share: Save:

রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’র টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল সিনেমা তৈরির কাজেও। এই মামলার তদন্তে প্রাথমিক ভাবে তেমনই জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে খবর, ২০১৪ সালে একটি বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করেন বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ঘনিষ্ঠ’, অধুনা ইডির হাতে ধৃত বাকিবুর রহমান। এই সিনেমাতেই অভিনয় করেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ইডি সূত্রের খবর, সিনেমার পোস্টারে প্রযোজক হিসাবে বাকিবুরের নাম ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, জ্যোতিপ্রিয় ‘বালু’ নামেও সমধিক পরিচিত।

ইডি সূত্রের খবর, সিনেমাটিতে টলিউডের বেশ কয়েকজন অভিনেতা এবং কলাকুশলী কাজ করেছিলেন। সিনেমার একটি ছোট দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল বলিউডের এক অভিনেত্রীকেও। রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলার তদন্তে ইডি সূত্রে আগেই খবর মিলেছিল যে, অবৈধ উপায়ে কালো টাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সাদা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। খোলা হয়েছিল বেশ কিছু ভুয়ো সংস্থাও।

ইডি সূত্রে খবর, ২৬ অক্টোবর জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে তিনটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই তিনটি সংস্থার মাধ্যমে ‘কালো টাকা’ লেনদেন হয়েছে। তিন জনেই ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ খারিজ করেন। যদিও বাড়িতে তল্লাশির সময় ওই তিন সংস্থার স্ট্যাম্প উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করেছে বলে দাবি ইডির। সহযোগীরা দাবি করেছেন, ওই তিন সংস্থার মালিকানা রয়েছে জ্যোতিপ্রিয়ের হাতে। অন্য দিকে ইডির দাবি, দু’দফায় রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে মোট ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর। ইডি সূত্রের খবর, বাকিবুরের সঙ্গে তাঁর কর্মীদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাটে এই টাকা লেনদেনের কথা উঠে এসেছে। তিনি যে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীকে টাকা দিয়েছিলেন, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তেমনটা নাকি স্বীকারও করে নিয়েছেন বাকিবুর। ইডি জানিয়েছে, বাকিবুরকে গ্রেফতারির সময় যে মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তা ঘেঁটেই লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশ্যে এসেছে ‘এমআইসি’ নামক এক ব্যক্তিকে একাধিক বার টাকা দেওয়ার তথ্যও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই ‘এমআইসি’-র অর্থ ‘মিনিস্টার ইন চার্জ’ এবং সেই মন্ত্রী আর কেউ নন, খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়।

ইডির তরফে আগেই দাবি করা হয়েছিল, বাকিবুর মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের ‘ঘনিষ্ঠ’। রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় পেশায় ব্যবসায়ী বাকিবুরের গ্রেফতারির পরেই এই মামলায় জ্যোতিপ্রিয়ের নাম উঠে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। ইডি সূত্রে খবর, পার্ক স্ট্রিট, নিউ টাউন-রাজারহাট এলাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে বাকিবুরের। এ ছাড়াও আরও একাধিক জায়গায় মোট আট থেকে ন’টি ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে। বিভিন্ন সংস্থায় বাকিবুরের শেয়ার রয়েছে। এমন মোট ছ’টি সংস্থার কথা জানতে পেরেছেন ইডি আধিকারিকেরা। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছ’টি সংস্থায় বাকিবুরের শেয়ারের পরিমাণ সাড়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি। হোটেল, পানশালা ছাড়াও একটি হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা ছিল বাকিবুরের। সব মিলিয়ে তাঁর মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৯০টির বেশি সম্পত্তি বর্তমানে ইডির আতশকাচের নীচে। এগুলি দুর্নীতির টাকায় গড়া কি না, এর সঙ্গে দুর্নীতির কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE