এক দিকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর বিভাগীয় তদন্ত, অন্য দিকে বেআইনি আর্থিক লেনদেন নিয়ে তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। আর দু’টোতেই রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডুর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এবং তাঁর বিশেষ সুযোগ-সুবিধে পাওয়ায়, এ সবের পিছনে সর্ষের মধ্যে ভূত থাকার ইঙ্গিত ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।
রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত কিন্তু শুরু হয়েছিল দু’বছরেরও বেশি সময় আগে। তখনই সংস্থার সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার কথা। বন্ধ করাও হয়েছিল দু’হাজারটিরও বেশি অ্যাকাউন্ট। কিন্তু এখন ইডি-র বিভাগীয় তদন্তে জানা যাচ্ছে, রোজ ভ্যালির সব অ্যাকাউন্ট সিল করা হয়নি, কিছু অ্যাকাউন্ট দিব্যি খোলা!
রোজ ভ্যালি মামলায় ইডি-র মূল তদন্তকারী অফিসার মনোজ কুমারের সঙ্গে রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার ইঙ্গিতবাহী ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর কেন্দ্রীয় সংস্থা বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে। সেই তদন্তেই রোজ ভ্যালির কিছু চালু অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। ইডি সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে আসা তাদের তিন কর্তা ওই সব অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছেন। কার বা কাদের গাফিলতিতে ওই অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করা হয়নি, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই সেগুলি খোলা রাখা হয়েছিল, এ বার সেটা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
শুভ্রার সঙ্গে তাঁর ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর ইডি তার সহকারী ডিরেক্টর পদমর্যাদার অফিসার মনোজ কুমারকে সাসপেন্ড করেছে। মনোজ ও শুভ্রার যোগাযোগ থাকার সঙ্গে রোজ ভ্যালির সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ না হওয়ার বিষয়টির কার্যকারণ সম্পর্ক আছে কি না, সেটা ইডি-র বিভাগীয় তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সব বন্ধ না-হওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে কোনওটি শুভ্রার কি না, তা-ও দেখছেন তদন্তকারীরা।
ইডি-র কাছে অভিযোগ এসেছে, দু’বছরের বেশি সময় ধরে গৌতম কুণ্ডু জেলে থাকলেও, প্রায় সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হলেও, শুভ্রার বিলাসবহুল জীবনযাপনে কোনও প্রভাব পড়েনি। ইডি-র অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, শুভ্রা কুণ্ডুকে সুবিধে করে দিতেই কি ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে হাত দেওয়া হয়নি? এর উত্তর খুঁজছেন দিল্লি থেকে আসা তদন্তকারীরা।
আবার বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় নেমে লালবাজারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই সংস্থার অধিকাংশ ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ কলকাতা পুলিশের দাবি, শুভ্রা কুণ্ডু ২০১৬-র মাঝামাঝি পর্যন্ত সংস্থার অলঙ্কার বিপণি বিভাগের ডিরেক্টর ছিলেন, তবু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা ইডি নেয়নি। অবশ্য ২০১৬-তেই শুভ্রা ওই পদ ছেড়ে দেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এ দিনও কলকাতা পুলিশের ডিসি ডিডি টু নিলু শেরপা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গোয়েন্দাদের একটি দল প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি বহুতল আবাসনে শুভ্রা কুণ্ডুর ফ্ল্যাটে হানা দেন।
ইডি সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পরে ইডি-র তরফে সংস্থার প্রায় দু’হাজারটিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। ইডি সূত্রের খবর, রোজ ভ্যালির বিভিন্ন নথি দেখতে গিয়েই সংস্থার কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালু থাকার বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে জানতে পারেন দিল্লি থেকে আসা তিন কর্তা। এর পর গৌতম ও শুভ্রাকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসাও করেন তাঁরা। তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, ওই দু’জনের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইডি-র তিন কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy