ট্রাঙ্ক ভর্তি করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে টাকা। নিজস্ব চিত্র।
অবশেষে গণনা শেষ! বৃহস্পতিবার ভোর ৪টে। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে বেলঘরিয়ায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে চলল উদ্ধার হওয়া টাকা গোনার কাজ। প্রশ্ন— শেষপর্যন্ত কত টাকা উদ্ধার হল ওই ফ্ল্যাট থেকে? সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকা আবাসন কমিটির সম্পাদক অঙ্কিত চুরারিয়া জানিয়েছেন, বেলঘরিয়ায় উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ। তবে ইডির তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দেওয়া পর্যন্ত কোনও তথ্যই সমর্থনযোগ্য নয়।
স্তূপীকৃত টাকার সঙ্গেই ওই ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে প্রচুর সোনার বাট এবং অলঙ্কার। একটি সূত্রে দাবি, উদ্ধার হয়েছে ৪.৩১ কোটি টাকার সোনা যাতে বাট বেশি, গয়না কম। এ ছাড়া বেশ কিছু সম্পত্তির দলিল, সম্পত্তি সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে।
এ ক্ষেত্রেও বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ইডির তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা ‘সিজার লিস্ট’ দেওয়া হয়নি। যতক্ষণ না বিষয়টি তদন্তকারী সংস্থার তরফে সরকারি ভাবে জানানো হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও অঙ্কই ‘সঠিক’ বলতে রাজি হচ্ছেন না কেউ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মীদের ডেকে এনে মোট চারটি বৃহদাকার যন্ত্রে চলছিল টাকা গোনা। কলকাতার একটি শাখা থেকে যন্ত্রগুলি বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে ইডি সূত্রে খবর। সাধারণত ওই যন্ত্র ব্যবহার হয় ‘কারেন্সি চেস্ট’-এ। ইডির একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে পাঁচটি সাধারণ যন্ত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকার পরিমাণ দেখে বড় মাপের যন্ত্র আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার দুপুরে বেলঘরিয়ার ওই ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে সেখানে ঢোকেন ইডির তদন্তকারী অফিসারেরা। সেখানেও টাকার পাহাড় দেখে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বিশেষ যন্ত্র আনানোর। অর্পিতাকে জেরা করেই তাঁরা ওই টাকার হদিস পান বলে সূত্রের বক্তব্য। ইডির একটি সূত্রের এমনও বক্তব্য যে, অর্পিতা তাঁদের বলেছেন, তাঁর বিভিন্ন ফ্ল্যাটকে নগদ টাকা গচ্ছিত রাখার জন্য ‘মিনি ব্যাঙ্ক’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা নাগাদ শুরু হয় টাকা গোনা। যা শেষ হতে হতে বৃহস্পতিবার ভোর হয়ে যায়। নোটগণনার সাক্ষী হিসেবে একজনকে উপরে নিয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তার আগেই ২০টি ট্রাঙ্ক-সহ একটি বড় ট্রাক নিয়ে আসা হয়েছিল ওই আবাসনে। ওই ট্রাঙ্কে ভরেই উদ্ধার করা টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বেলঘরিয়ার ‘ক্লাব টাউন’ আবাসনে বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ পৌঁছয় ইডি। ওই আবাসনে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার। দু’টি ফ্ল্যাটের একটিতে টাকার সন্ধান পান তদন্তকারীরা। তল্লাশির পর অন্য ফ্ল্যাটটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। তার পর শুরু হয় অন্য ফ্ল্যাটে টাকা গোনা।
প্রথম রাউন্ডে গণনার পর ১৫ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। তার পরেও গণনা চলে। দ্বিতীয় রাউন্ডে তা পৌঁছয় ২০ কোটিতে। তার পরেও দীর্ঘ সময় তদন্তকারী অফিসার এবং ব্যাঙ্কের কর্মীরা ওই ফ্ল্যাটটিতে ছিলেন। যা থেকে এলাকার মানুষ অনুমান করছেন, উদ্ধার করা টাকার অঙ্ক ২০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে ভোরে টাকা গোনার কাজ শেষ হলেও ইডির তরফে কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। টাকার সঠিক অঙ্কের কথাও জানানো হয়নি। ফলে বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে, তার একেবারে সঠিক হিসেব কেউই দিতে পারছেন না।
ইডি সূত্রের খবর, কোটি কোটি টাকার সঙ্গেই ফ্ল্যাটে পাওয়া গিয়েছে প্রচুর সোনার বাট এবং অলঙ্কার। সব মিলিয়ে যার বাজারমূল্য চার কোটি ৩১ লক্ষ টাকা হতে পারে। ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু দলিলও পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। তবে ইডির তরফে দলিল বা নথি নিয়েও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অনুমান, আদালতে সেই নথি পেশ করার সময় বেলঘরিয়া থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ টাকা এবং অলঙ্কারের হিসেব মিলবে। সে হিসেব মিলতে পারে সরকারি ‘সিজার লিস্ট’ থেকেও।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার টালিগঞ্জের একটি আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ২২ কোটি টাকা, সোনার গয়না এবং বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি। তার পর জানা যায়, বেলঘরিয়াতেও ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। বুধবার সেখানেই অভিযান চালায় ইডি।
তবে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের অভিযান বেলঘরিয়াতেই শেষ হয়ে যাবে কি না, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অর্পিতার বা পার্থর আরও কোনও সম্পত্তি রয়েছে কি না, অর্পিতার মালিকানাধীন বিনোদন সংস্থায় তল্লাশি চালালে সেখানেও এমন টাকা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই কৌতূহল ছড়িয়েছে। বুধবার বেলঘরিয়ার পশাপাশিই বালিগঞ্জ প্লেস এবং কসবার রাজডাঙা মেন রোডের দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর। কিন্তু তাতে কী আছে, তা নিয়ে তদন্তকারী সংস্থার তরফে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। এখন দেখার, ওই নথির ভিত্তিতে ইডি আরও কোথাও তল্লাশি অভিযান চালায় কি না। পার্থ এবং অর্পিতা— দু’জনেই ৩ অগস্ট পর্যন্ত ইডির হেফাজতে থাকবেন। তাঁদের জেরা করে আরও কোথাও এমনই নগদ টাকার হদিস পাওয়া যায় কি না, সেটাই দেখার।
ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ টাকা ভর্তি ট্রাঙ্কগুলিকে নীচে নামানো হয়। মোট ন’টি ট্রাঙ্ক তোলা হয় ট্রাকে। সূত্রের খবর, এই ন’টি ট্রাঙ্কের আটটির মধ্যে ছিল টাকা এবং একটির মধ্যে ছিল সোনার বাট ও গয়না। ট্রাঙ্কগুলি নিয়ে ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ এসবিআইয়ের হেড অফিসের উদ্দেশে রওনা দেয় ট্রাকটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy