Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ED

সাড়ে ১৪ ঘণ্টার ম্যারাথন তল্লাশির পর আমির খানের বাড়ি থেকে বেরোল ইডি, উদ্ধার ১৭.৩২ কোটি টাকা

সকাল থেকে রাত গড়িয়ে গেলেও আমিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা গোনার কাজ চলতেই থাকে। একটা সময়ে ট্রাঙ্কের পর ট্রাঙ্ক ভরে নগদ টাকা তোলা হয় আমিরের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে।

গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ীর বাড়িতে উদ্ধার বিপুল পরিমাণ টাকা বার করে নিয়ে আসা হচ্ছে।

গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ীর বাড়িতে উদ্ধার বিপুল পরিমাণ টাকা বার করে নিয়ে আসা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:২০
Share: Save:

প্রায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান শেষ হল। অবশেষে গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়ি থেকে বেরোলেন কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ গার্ডেনরিচ-সহ কলকাতার ছ’টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে ইডি। তার পর থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। শুধু গার্ডেনরিচে আমিরের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে নগদে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া, তাঁর নিউটাউনের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও কয়েক কোটি নগদ। এমনটাই জানা গিয়েছে ইডির একটি সূত্রে।

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে গার্ডেনরিচের আমিরের বাড়িতে টাকা গোনার কাজ শুরু করেছিলেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। পাশাপাশি, ওই বাড়িতে আরও টাকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তল্লাশি চালিয়েছেন ইডির আধিকারিকেরা। সকাল থেকে রাত গড়িয়ে গেলেও নোট গোনার মেশিনে আমিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার টাকা গোনার কাজ চলতেই থাকে। একটা সময়ে ট্রাঙ্কের পর ট্রাঙ্ক ভরে নগদ টাকা তোলা হয়েছে আমিরের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে। অন্য দিকে, একের পর এক ট্রাঙ্ক ঢোকানো হয়েছে আমিরের বাড়িতে। ওই ট্রাঙ্কগুলিতে ভরেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ টাকা। ইডি সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। টাকা উদ্ধারের পর আমিরের বাড়ির লোকজনদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে এল, তা খতিয়ে দেখবে ইডি।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ইডি আধিকারিকদের যে দলটি অভিযান শুরু হয়েছিল, তা শেষ হয় রাত ১১টা নাগাদ। এই সাড়ে ১৪ ঘণ্টার অভিযানে ইডির হাতে উঠে এসেছে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। হদিস পাওয়া গিয়েছে বিপুল সম্পত্তিরও।

সূত্রের খবর, একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলি, পার্ক স্ট্রিট, মোমিনপুরের বন্দর এলাকা, নিউটাউন-সহ শহরের ছ’টি জায়গায় অভিযান শুরু করেছিল ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির আধিকারিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা। অভিযানের সময় সিআরপিএফ জওয়ানদের আমিরের বাড়ির বাইরে মোতায়েন রাখা হয়। ভিতরে চলতে থাকে চিরুনি তল্লাশি।

বস্তুত, শনিবার সাতসকালেই গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলিতে আমিরের দোতলা বাড়িতে পৌঁছে যান ইডির আধিকারিকেরা। সাদামাটা ওই দোতলা বাড়িতে তল্লাশি শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেরিয়ে আসে অসংখ্য প্লাস্টিকের থলেতে মোড়া নোটের বান্ডিলের পর বান্ডিল। সূত্রের খবর, দোতলায় একটি ঘরের খাটের তলা থেকে অসংখ্য বান্ডিলে মোড়া ৫০০ টাকার ব্যাঙ্কনোট বার হতে থাকে। অনেকগুলি প্লাস্টিকের থলিতে সেগুলি মুড়ে খাটের তলায় রাখা ছিল। ওই থলিগুলিতে ২,০০০ টাকার বেশ কিছু বান্ডিলও রাখা ছিল। থরে থরে সাজানো টাকার বান্ডিল গুনতে একটা সময়ে আসেন স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মীরা। আনা হয় নোট গোনার আটটি যন্ত্রও। এক সময় দেখা যায় যে আমিরের বাড়ির দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে ১০টি স্টিলের ট্রাঙ্ক ভরা ট্রাক। রাতের দিকে আরও কয়েকটি স্টিলের ট্রাঙ্ক আনা হয় আমিরের বাড়িতে। গার্ডেনরিচে আমিরের বাড়ি ছাড়াও, তাঁর নিউটাউনের অফিসেও শনিবার হানা দিয়েছিল ইডি। সেখান থেকেও বেশ কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এমনটাই জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে।

শনিবার এই তল্লাশি অভিযানের মাঝেই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইডি। তাতে ইডি জানায়, গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খানের ছেলে আমিরের বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয় চলতি বছরের গোড়ায়। সেই পুরনো মামলার তদন্তে নেমে শনিবার সকালে আমিরের বাড়ি ও অফিসে অভিযান শুরু করেছিল তারা।

একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে বহু গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আমির-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি এফআইআর করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইডি। ওই এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪৬৮, ৪৭১, এবং ৩৪ ধারায় প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ একাধিক অভিযোগ যোগ করা হয়েছে।

ইডির দাবি, ‘ই-নাগেটস’ নামে একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিতেন আমিররা। গ্রাহকদের টাকা হাতানোর জন্যই ওই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল। ওই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকেরা গোড়ায় মোটা অঙ্কের কমিশন পেতেন। অ্যাপটির মাধ্যমে নিজেদের ওয়ালেটে সেই টাকা পেয়ে যেতেন গ্রাহকেরা। যা থেকে অনায়াসে সেই টাকাও তুলতে পারতেন তাঁরা। এ ভাবেই গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের পর আমিররা তার ফায়দা তুলতেন বলে ইডির দাবি। আরও মোটা কমিশনের লোভে গ্রাহকেরা বড়সড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করলে আচমকাই টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ হয়ে যেত বলে অভিযোগ। অ্যাপের ‘সিস্টেম আপগ্রেড’-সহ নানা অজুহাত দেখিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হত বলে দাবি। ফলে ওই অ্যাপের সার্ভার থেকে সমস্ত প্রোফাইল সংক্রান্ত তথ্যও মুছে যেত। ইডির আরও দাবি, সেই সময়েই গ্রাহকেরা টের পেতেন যে, তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। শনিবার তল্লাশিতে আমিরের বাড়ি থেকে যে নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে তাতে একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্টের খোঁজও পাওয়া গিয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইডি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy