গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রায় ১২ ঘণ্টার অভিযানে ইডির উদ্ধার করেছে কোটি কোটি টাকা। —নিজস্ব চিত্র।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান কি শেষের পথে? সূত্রের দাবি অন্তত তেমনই। শনিবার বিকেলে যে টাকা গোনার যন্ত্র আনা হয়েছিল গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়িতে, তা একে একে বার করে তোলা হচ্ছে গাড়িতে। উল্টো দিকে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক থেকে একের পর এক ট্রাঙ্ক ঢোকানো হচ্ছে আমিরের বাড়িতে। এই ট্রাঙ্কগুলিতে ভরেই নিয়ে যাওয়া হবে উদ্ধার হওয়া টাকা। ইডি সূত্রে খবর, এই টাকার পরিমাণ ১৭ কোটিরও বেশি।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে যে অভিযান শুরু হয়েছিল, তা রাত সাড়ে ৮টা নাগাদও শেষ হয়নি। প্রায় ১২ ঘণ্টার এই অভিযানে ইডির হাতে উঠে এসেছে ১৭ কোটিরও বেশি টাকা।
সূত্রের খবর, একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলি, পার্ক স্ট্রিট, মোমিনপুরের বন্দর এলাকা, নিউটাউন-সহ শহরের ছ’টি জায়গায় অভিযান শুরু করেছিল ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির সঙ্গে ছিলেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা। শনিবার সকালেই গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলিতে আমিরের দোতলা বাড়িতে পৌঁছে যান ইডির আধিকারিকেরা। তল্লাশি শুরুর ঘণ্টা তিনেক পরে দোতলায় একটি ঘরের খাটের তলা থেকে বার হতে থাকে বান্ডিলের পর বান্ডিল ৫০০ টাকার ব্যাঙ্কনোট। অনেকগুলি প্লাস্টিকের থলিতে সেগুলি মুড়ে খাটের তলায় রাখা ছিল বলে সূত্রের খবর। ওই থলিগুলিতে ২০০০ টাকার বেশ কিছু বান্ডিলও রাখা ছিল। থরে থরে সাজানো টাকার বান্ডিল গুনতে ডাক পড়ে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মীদের। আনা হয় নোট গোনার আটটি যন্ত্রও। এক সময় দেখা যায় যে আমিরের বাড়ির দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে ১০টি স্টিলের ট্রাঙ্ক ভরা ট্রাক। রাতের দিকে আরও পাঁচটি স্টিলের ট্রাঙ্ক আনা হয় আমিরের বাড়িতে। গার্ডেনরিচে আমিরের বাড়ি ছাড়াও, তাঁর নিউটাউনের অফিসেও শনিবার হানা দিয়েছিল ইডি। সেখান থেকেও বেশ কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে।
শনিবার এই তল্লাশি অভিযানের মাঝেই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইডি জানিয়ে দেয়, গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খানের ছেলে আমিরের বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই পুরনো মামলার তদন্তে নেমে শনিবার সকালে আমিরের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল তারা। ইডির দাবি, একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে বহু গ্রাহককে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আমির-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি এফআইআর করা হয়েছিল। ওই এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪৬৮, ৪৭১, এবং ৩৪ ধারায় প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ একাধিক অভিযোগ যোগ করা হয়েছে। ইডির দাবি, ‘ই-নাগেটস’ নামে একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিতেন আমিররা।
বস্তুত, ইডির অভিযোগ, গ্রাহকদের টাকা হাতানোর জন্যই ওই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল। ওই অ্যাপের মাধ্যমে খেলায় অংশগ্রহণকারী গ্রাহকেরা গোড়ায় মোটা অঙ্কের কমিশন পেতেন। অ্যাপটির মাধ্যমে নিজেদের ওয়ালেটে সেই টাকা পেয়ে যেতেন গ্রাহকেরা। যা থেকে অনায়াসে সেই টাকাও তুলতে পারতেন তাঁরা। এ ভাবেই গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের পর আমিররা তার ফায়দা তুলতেন বলে ইডির দাবি। আরও মোটা কমিশনের লোভে গ্রাহকেরা বড়সড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করলে আচমকাই টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ হয়ে যেত বলে অভিযোগ। অ্যাপের ‘সিস্টেম আপগ্রে়ড’-সহ নানা অজুহাত দেখিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হত বলে দাবি। ফলে ওই অ্যাপের সার্ভার থেকে সমস্ত প্রোফাইল সংক্রান্ত তথ্যও মুছে যেত। ইডির আরও দাবি, সে সময়ই গ্রাহকেরা টের পেতেন যে তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
শনিবার তল্লাশি অভিযানের সময় একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্টের খোঁজও পাওয়া গিয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইডি।
গার্ডেনরিচের বাড়িতে শনিবারের এই অভিযানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই কেন্দ্রীয় সংস্থাটির পদক্ষেপের কথা। জুলাইয়ের শেষে প্রথমে পার্থের বাড়ি এবং পরে অর্পিতার একাধিক ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রথমে প্রায় ২২ কোটি উদ্ধার হয়েছিল। পরে আরও একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ২৮ কোটি টাকার নোট পাওয়া যায়। ওই দুই জায়গা থেকে ১১ কেজি সোনার গয়না এবং বিদেশি মুদ্রাও বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডা। এ ছাড়া, পার্থ এবং অর্পিতার নামে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাটেরও হদিস মিলেছিল। বস্তুত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে পার্থের পাশাপাশি অর্পিতাকেও গ্রেফতার করেছে ইডি। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দু’জনেই ইডি হেফাজতে রয়েছেন। শনিবার ভিন্ন একটি মামলায় আবার শহরে টাকার পাহাড়ের দেখা মিলল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy