সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। —ফাইল চিত্র।
‘কাকু’র অধরা কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের উপায় খুঁজতে এ বার দিল্লিতে বৈঠকে বসলেন ‘ক্ষুব্ধ’ ইডি কর্তারা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি, বাধ্য হয়েই এ বার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে এ নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ারও।
দুর্নীতির তদন্ত এ রাজ্যের একাধিক ‘প্রভাবশালীর’ দরজায় কড়া নাড়বে কি না, তার উত্তর ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনাতেই লুকিয়ে বলে দীর্ঘদিন ধরেই ইডি সূত্রে দাবি। কিন্তু মাসের পর মাস চেষ্টা করেও নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র গলার স্বরের নমুনা এখনও পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। তাদের অভিযোগ, যত বার সেই আবেদন করা হয়েছে, তত বার ‘কাকুর অসুস্থতার’ কারণ দেখিয়ে তা নাকচ করে দিয়েছে এসএসকেএম। শুক্রবার এ জন্য জোকার ইএসআইয়ে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স-সহ হাজির হয়েও শুনতে হয়েছে ‘কাকু’ হঠাৎ ‘অস্বস্তি বোধ করায়’ তাঁকে রাখতে হয়েছে আইসিসিইউ-তে। এই পরিস্থিতিতে উপায় খুঁজতে দিল্লিতে বৈঠকে বসলেন ইডি কর্তারা।
তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি, এই বৈঠকে যোগ দিতে শনিবার সকালে কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন একদল অফিসার। এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন সুজয়কৃষ্ণের সাম্প্রতিক শারীরিক পরীক্ষার বিভিন্ন রিপোর্ট নিয়ে রবিবারেও দিল্লি গিয়েছেন একাধিক অফিসার।
শুধু তা-ই নয়, নিম্ন আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘কাকুর অসুস্থতার অজুহাতে’ তাঁকে ইডির হাতে তুলে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ জানিয়ে শীঘ্রই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে ইডি সূত্রে ইঙ্গিত। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে দিচ্ছেন না। আবার অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও নানা আইনি সমস্যা তুলে বাধা দিচ্ছেন। জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পুরো বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে।’’
দিল্লির বৈঠক সম্পর্কে ইডি সূত্রে দাবি, ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা পেতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা ঠিক করতেই দিল্লির সদর দফতরে ওই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। সেখানে ইডির আইনি অফিসারেরাও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, শুক্র ও শনিবার এসএসকেএমে ‘কাকু’র যে সব শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট দিল্লি নিয়ে গিয়ে কেন্দ্রের অধীনস্থ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখিয়ে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
ইডি সূত্রে দাবি, মাস পাঁচেক আগে ‘কাকু’কে গ্রেফতারের পরে তাঁর মোবাইল থেকে বাজেয়াপ্ত করা একাধিক অডিয়ো ক্লিপ থেকে এমন কিছু কথোপকথন পাওয়া গিয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে আদালতে পেশ করা যাবে। ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনার সঙ্গে অডিয়ো ক্লিপের গলার আওয়াজ ফরেন্সিক পরীক্ষায় মিলে গেলে, তা আদালতে প্রামাণ্য নথি হিসেবে গ্রাহ্য হবে এবং সে ক্ষেত্রে একাধিক প্রভাবশালীকে তদন্তের আওতায় আনা যাবে বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।
নিম্ন আদালতে এই কারণে ‘কাকু’র গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য আবেদন করে ইডি। প্রায় মাস চারেক আগে সেই আর্জি মঞ্জুরও হয়। যেহেতু ‘সাউন্ডপ্রুফ’ ঘরে এই নমুনা সংগ্রহ করতে হয়, তাই সুজয়কে রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ইডির। কিন্তু হাসপাতাল থেকে না-ছাড়ায় এখনও তা সম্ভব হয়নি।
প্রথমে স্ত্রীর মৃত্যু এবং তার পরে বেসরকারি হাসপাতালে বাইপাস সার্জারির পরে গত প্রায় মাস চারেক ধরে এসএসকেএমে ভর্তি সুজয়। ইডির অভিযোগ, গত এক মাসে কখনও না কখনও ‘কাকু’র শরীরের অবস্থা অনুযায়ী তাঁকে ইডির হাতে তুলে দিতে পারত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তা করা হয়নি বলে অভিযোগ তাদের সূত্রে।
এরই মধ্যে ‘কাকু’কে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদালতে ইডির করা আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেখানে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয়নি। ইডি সূত্রে অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাকুর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। শুক্রবার সকালে তাঁকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তা এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু শুক্রবার সকালে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ইডি এসএসকেএমে পৌঁছলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় যে, বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ‘কাকু’ অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে কার্ডিওলজির আইসিসিউতে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। তাঁর জন্য তিন সদস্যর একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। সূত্রের দাবি, শুক্রবার দিনভর ইডির তদন্তকারীদের সঙ্গে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের একাধিক বার বৈঠক হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘কাকু’কে ইএসআইয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেননি এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা।
ইডির এক কর্তার কথায়, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের এ হেন আচরণের প্রেক্ষিতে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই বিষয়েও আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy