অবৈধ উপায়ে ৩৫ জনের চাকরি স্কুলে! কুন্তলকে জেরায় নতুন তথ্য পেলেন ইডির আধিকারিকরা। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে নতুন তথ্য হাতে পেলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তদন্তকারীরা। শাসকদল তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে জেরা করে ইডি আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, তাঁর মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে অন্তত ৩৫ জনের চাকরি হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় প্রত্যেকেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে, অর্থাৎ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে খবর, অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া স্কুলশিক্ষকরা মূলত মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাসিন্দা।
চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে চাকরিপ্রাপকদের কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া হয়েছিল, কারা সেই টাকা তুলে আনতেন, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন ইডির আধিকারিকরা। ইডি সূত্রের দাবি, ২০১৪ থেকে অর্থাৎ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার ৩ বছর পর থেকেই নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘জড়িত’ কুন্তল এবং তৃণমূলের আর এক যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই হুগলির বলাগড় অঞ্চলের বাসিন্দা। শনিবার কুন্তল অভিযোগ করেন যে, পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা গোপাল দলপতি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডের ‘আসল (মেন) লোক’। পাশাপাশি, মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ তাপস মণ্ডল এবং গড়িয়ার ব্যবসায়ী নীলাদ্রি ঘোষের বিরুদ্ধেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ধৃত যুবনেতা। কিন্তু বলাগড়ের আর এক যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি কোনও টাকা দেননি বলে জানিয়েছেন কুন্তল।
শুক্রবার বিধাননগর হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কুন্তলকে। সেখানে থেকে সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কুন্তল বলেন, ‘‘অনেক কোটি টাকা নিয়েছে ওরা। আমার কাছ থেকে জোর করে নিয়েছে।’’ তাপসের ঘনিষ্ঠ গোপাল সকলের হয়ে টাকা নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন কুন্তল। তাঁর কথায়, ‘‘গোপাল দলপতি সব থেকে ‘মেন’। সকলের হয়ে টাকা নিয়েছে।’’
কুন্তল শুক্রবার বলেন, ‘‘শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও কথা আমি বলতে পারব না কিছু। আমি জানি না।’’ এর আগে কুন্তল দাবি করেছিলেন যে, তিনি তাপসকে চেনেন না। উল্টে তাপস দাবি করেন যে, কুন্তলই শান্ত্বনুর সঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। শুক্রবার ধৃত যুবনেতা দাবি করলেন, তাপসের সঙ্গে তিনি শান্তনুর আলাপ করিয়ে দেননি।
কুন্তলকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এর পর গত শুক্রবার সকাল থেকে তদন্তে নামে ইডি। তবে কুন্তল দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ হয়েছে। তিনি এ-ও অভিযোগ করেন, তাঁর সন্তানকে অপহরণের হুমকি দিয়েছিলেন তাপস। তবে এই পুরো ঘটনার সঙ্গে তাঁর দলকে না জড়ানোর কথা বলেন কুন্তল। এর আগে মঙ্গলবারও তাপস এবং কুন্তলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। তিনিও কি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত? এর জবাবে তাপস বলেছিলেন, ‘‘যদি মনে করেন, তবে তাই ভেবে নেবেন। তা হলে আর কোনও উত্তর দেব না।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূল নেতা কুন্তল পেশাগত ভাবে ব্যবসায়ী। সূত্রের খবর, একাধিক বিএড কলেজ আছে তাঁর। তবে সেই কলেজের মালিক একাধিক। এই সূত্র ধরে তাপসের সঙ্গে কুন্তলের পরিচয় বলে খবর।
ইডি জানিয়েছে, কুন্তল এবং শান্তনুকে মুখোমুখি বসিয়ে বাকি এজেন্টদের খোঁজখবর জানার চেষ্টা চলছে। গোপাল দলপতি নামে তাপসের পরিচিত এবং ‘কুন্তল-ঘনিষ্ঠ’ এক এজেন্ট নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় সেই গোপাল এখন তিহাড় জেলে বন্দি। আরও কয়েক জন এজেন্টের হদিস দিয়েছেন তাপস। ওই এজেন্টরা যে কুন্তল এবং শান্তনুর ‘ঘনিষ্ঠ’, সেই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, কুন্তল এজেন্ট ও চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এবং শান্তনু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দুর্নীতি চালিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy