মুম্বইয়ের রহিস এলাকার একটি ফ্ল্যাট। অডিট রিপোর্টে প্রথমে সেটি দেখানো হয়েছিল সংস্থার অফিস এবং স্থায়ী সম্পদ (ফিক্সড অ্যাসেট) হিসাবে। পরে সেটাই হয়ে যায় ওই সংস্থার বিনিয়োগ বা স্থাবর সম্পত্তি। শেষ পর্যন্ত ফ্ল্যাটের মালিকানা চলে গিয়েছে সংস্থার এক ডিরেক্টর ও তাঁর আত্মীয়ের নামে।
সারদা-কাণ্ডে তদন্তে নেমে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মুম্বইয়ের এমনই এক ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে, যাঁর আসল মালিক শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, যিনি মমতা-ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পী হিসেবেই পরিচিত। তাঁর সংস্থা দেবকৃপা ব্যাপার প্রাইভেট লিমিটেড এবং ‘এখন সময়’ চ্যানেল কেনাবেচা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি গোয়েন্দাদের। মুম্বইয়ের ওই ফ্ল্যাটটি নিয়েও কম ধন্দে নেই তাঁরা। ইডি সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে দেবকৃপা সংস্থাটির হিসেব-নিকেশের মতো ফ্ল্যাটের কাগজপত্রেও রয়েছে বিস্তর গোলমাল।
দেবকৃপা সংস্থা ও চ্যানেলটি সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করা নিয়ে ইতিমধ্যে শুভাপ্রসন্ন ও তাঁর স্ত্রীকে বেশ কয়েক বার জেরা করেছে ইডি এবং সিবিআই। ২০০৮-০৯ এবং ২০০৯-১০ এই দুই আর্থিক বছরে দেবকৃপার আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য ঘেঁটে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উত্তর-পূর্ব মুম্বইয়ের পওই এলাকায় লেক ফ্লোরেন্স-এ একটি ফ্ল্যাট কিনেছিল সংস্থাটি। দেবকৃপার অডিট রিপোর্ট থেকে ইডি জানতে পেরেছে, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন (অন্যতম এক ডিরেক্টর) ও তাঁর এক আত্মীয়ের তরফে ওই ফ্ল্যাটটি কিনেছিল সংস্থাটিই। তবে মোট কত টাকায় ওই ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল তা নিয়ে গোয়েন্দারা ধন্দে রয়েছেন। কারণ, ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য দেবকৃপার তরফে ৪২ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। কিন্তু মুম্বইয়ের ওই এলাকায় ফ্ল্যাটের যা মূল্য হওয়া উচিত, তাতে ৪২ লক্ষ টাকা দিয়েই ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছিল, না কি ‘অন্য ভাবে’ তার থেকে বেশি দাম দেওয়া হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখছে ইডি।
ফ্ল্যাটের দেখানো দামের মতোই ওই সম্পত্তির মালিকানা বদল নিয়েও সমান ধন্দে গোয়েন্দারা। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-০৯-এর অর্থ বর্ষের অডিট রিপোর্টে ফ্ল্যাটটিকে ‘স্থাবর সম্পত্তি’ হিসাবে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছিল, ফ্ল্যাটটি দেবকৃপার অফিস হিসাবে রয়েছে। কিন্তু পরের বছরেই (২০০৯-১০) অডিট রিপোর্টে ওই ফ্ল্যাটটিকে বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইডি-র খবর, এখন আর সংস্থা নয়, ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে শুভাপ্রসন্নবাবু ও তাঁর এক আত্মীয়ের নামে।
শনিবার দুপুরে শুভাপ্রসন্নের মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু দেবকৃপা নিয়ে প্রশ্ন করতেই ফোন রেখে দেন তিনি। পরে আরও দু’বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস করে মুম্বই-এর ফ্ল্যাট নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তারও কোনও জবাব মেলেনি।
কিন্তু একটি সংস্থার অর্থে কী করে তার এক ডিরেক্টরের নামে (অন বিহাফ অব) ফ্ল্যাট কেনা হল? যদি তা হয়েও থাকে, তবে কেন তাকে অফিস হিসেবে দেখানো হল? আবার সেই অফিস পরে কেন এক ডিরেক্টরকে হস্তান্তর করা হল? তদন্তে নেমে এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ইডি-র গোয়েন্দারা। কারণ, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মনে হয়েছে, এই ভাবে সম্পত্তি কেনাবেচা বা হাত বদল করা যায় না। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটটির জন্য শুভাপ্রসন্নবাবুর কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা-ও জানার চেষ্টা হচ্ছে।
ফ্ল্যাট নিয়ে অডিটে এমন গোলমেলে রিপোর্ট লেখা থাকলেও সেটা এখন ঠিক কার দখলে, তা জানতে পারেনি ইডি। তাদের বক্তব্য, ফ্ল্যাটটি সম্পর্কে শুভাপ্রসন্নবাবু অনেক কিছুই জানেন। তাঁকে এই নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
সম্প্রতি ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের একটি দল সল্টলেকে ইডির দফতরে গিয়ে দেবকৃপার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জমা দিয়ে এসেছে। ওই সংগঠনের তরফে অমিতাভ মজুমদারের দাবি, “শুভাপ্রসন্নবাবু দেবকৃপার অনেক তথ্য গোপন করছেন। একটি সংস্থার অফিস হিসেবে দেখানো ফ্ল্যাট কী ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা আমরা ইডিকে জানিয়েছি। যে প্রক্রিয়ায় ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা শুভাপ্রসন্নবাবুর নামে হস্তান্তর করা হয়েছে, তা ঘোরতর অন্যায়।”
ইডি এবং সিবিআই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করার পরে মুম্বইয়ের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছিল। সূত্রের খবর, সারদার বিভিন্ন কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মুম্বইয়ের একটি ফ্ল্যাটের প্রসঙ্গ তদন্তকারীদের সামনে এসেছিল। কিন্তু সেই ফ্ল্যাট সম্পর্কে এখনও পর্যাপ্ত তথ্য হাতে আসেনি তদন্তকারীদের। এখন দেবকৃপার মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটের তথ্য আসায় নড়চড়ে বসেছেন তদন্তকারীরা। দেবকৃপার ফ্ল্যাটটি সারদার কাজে ব্যবহার হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে ইডি এবং সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy