বিধিবদ্ধ কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে ‘মানি লন্ডারিং’ বা টাকা পাচারের তদন্ত করার ক্ষমতা আছে তাদের। সর্বোপরি সেই তদন্ত করার জন্য আদালত তাদের নির্দেশও দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএস-এর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি এখনও পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থা না-নেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্ট ক্ষুব্ধ। ওই লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুতে গড়িমসি করায় মঙ্গলবার ইডি-কে ভর্ৎসনা করে আদালত।
এমপিএসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইডি-র পক্ষ থেকে এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশ চাওয়া হলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তাদের ক্ষোভ উগরে দেয়। পরে তারা ইডি-কে নির্দেশ দেয়, এমপিএসের বিরুদ্ধে অবিলম্বে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে হবে।
ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন একই সঙ্গে এমপিএস-কে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে ডিরেক্টর-সহ সব কর্মকর্তা এবং সংস্থার যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা তৈরি করতে হবে। এবং আমানতকারীদের টাকা তারা কী ভাবে ফেরত দেবে, প্রস্তাবের আকারে তা জমা দিতে হবে আদালতে।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে রোজ ভ্যালি, এমপিএসের মতো রাজ্যের আরও কিছু বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় বিপুল নয়ছয় ধরা পড়ে। একটি অভিযোগ এই ধরনের প্রায় সব সংস্থার বিরুদ্ধেই উঠেছে। সেটি হল, কম সময়ে বহু গুণ ফেরতের টোপ দিয়ে টাকা তুলেও সংস্থাগুলি লগ্নিকারীদের তা ফিরিয়ে দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে গত ৩০ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পাল নির্দেশ দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য জুড়ে এমপিএসের সব কার্যালয় বন্ধ করে দিতে হবে। সেই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে মামলা দায়ের করে এমপিএস। গত ৯ এপ্রিল সেই মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। বরং তারা জানিয়ে দেয়, ওই সংস্থার আমানতকারীদের টাকা ফেরতের বিষয়টিকেই তারা আপাতত বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে।
এমপিএসের তরফে আবেদন জানানো হয়, বিচারপতি পাল এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপারস লিমিটেডের সব অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমপিএস গোষ্ঠীর অধীন অন্যান্য সংস্থার অফিস বন্ধ করতে বলেননি। ওই সব সংস্থার সব অফিস বন্ধ থাকায় কর্মীরা সমস্যায় পড়েছেন। বেতন পাচ্ছেন না। আদালত বিহিত করুক। গত ৯ এপ্রিলের শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি। আদালত সে-দিন নির্দেশ দিয়েছিল, ইডি-কে মামলায় যুক্ত করতে হবে। কারণ, ডিভিশন বেঞ্চ মনে করে, ওই তদন্তকারী সংস্থাকে মামলায় যুক্ত না-করলে আমানতকারীরা আগামী ১০ বছরেও টাকা ফেরত পাবেন না।
মঙ্গলবার শুনানির শুরুতেই এমপিএসের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইডি-র আইনজীবী ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ চান। শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি চেল্লুর ও বিচারপতি বাগচী। তাঁরা প্রায় সমস্বরে বলেন, ইডি বিধিসম্মত কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। তাদের হাতে টাকা পাচারের তদন্ত করার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও তদন্ত শুরু না-করে তারা আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা করছে! বিস্ময় প্রকাশ করে বেঞ্চ বলে, কোনও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এটা করতে পারে কী করে! আদালত তো কবেই অভিযুক্ত লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তার পরে বিচারপতিরা ইডি-র আইনজীবীকে নির্দেশ দেন, পরবর্তী শুনানির দিন থেকে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কোনও অফিসার যেন আদালতে নিয়মিত হাজির থাকেন।
সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি-র আইনজীবী হীরক মিত্র এ দিন আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল সংস্থার অনুমতি ছাড়াই বাজার থেকে টাকা তুলেছে এমপিএস। আদালতে একাধিক বার তা জানিয়েছে সেবি।
এমপিএসের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে জানান, তাঁরা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে চান। এর আগেও ওই লগ্নি সংস্থা আদালতে তা জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতি জানান, কী ভাবে তারা টাকা ফেরত দিতে চায়, সেই ব্যাপারে আদালতে প্রস্তাব পেশ করুক এমপিএস। সেই সঙ্গে তারা জানাক, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ কত। বাজারে তাদের আর্থিক দায় কত, আদালতে সেটাও জানানো হোক। বিচারপতি বাগচী এমপিএসের আইনজীবীকে জানান, শুধু সংস্থার সম্পত্তি নয়, সংস্থার সব ডিরেক্টরের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণও জানাতে হবে। প্রয়োজনে ডিরেক্টরদের সম্পত্তি বেচেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে এমপিএস-কে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy