সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল ছবি।
ইডি ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করল। বুধবার রাতে প্রায় পাঁচ মাস পরে ‘কাকু’কে হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁকে আলাদা ঘরে নিয়ে গিয়ে একই বাক্য বার বার করে বলানো হয়। ওই সূত্রের খবর, কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও। কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের পর রাত ৩টে ২০ নাগাদ সুজয়কৃষ্ণকে ফের ইএসআই হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে ফিরিয়ে আনা হয়।
গত ৩০ মে ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে ইডি। তার পরের দিন তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করে ইডি জানিয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুজয়ের কথায় ফোন থেকে মুছে দিয়েছিলেন পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরা। ইডি সূত্রে জানা যায়, এই বিষয়ে সুজয়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু তাদের কাছে এই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘কল রেকর্ডিং’ আছে বলে ইডি সূত্রে দাবি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই কল রেকর্ডিংয়ে থাকা কথোপকথনের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ‘কাকু’কে দিয়ে বার বার বলানো হয়েছে। রাহুলকে তথ্য মোছার নির্দেশ দেওয়া ব্যক্তিটি সুজয়কৃষ্ণই ছিলেন কি না, এতে তা নিশ্চিত ভাবে বোঝা যাবে বলে ইডি সূত্রে খবর।
বুধবার রাতে হঠাৎই এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের (যেখানে ‘কাকু’ চিকিৎসাধীন ছিলেন) সামনে এসে পৌঁছয় ইএসআই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। হাসপাতালের সামনে মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ইডি আধিকারিকেরাও এসএসকেএমে পৌঁছন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই আন্দাজ করা গিয়েছিল, ‘কাকু’কে এসএসকেএম থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। রাতে দেখা যায়, এসএসকেএমের হৃদ্রোগ বিভাগের কেবিন থেকে বার করা হয়েছে সুজয়কে। খয়েরি রঙের চাদর মুড়ি দিয়ে ছিলেন ‘কাকু’। মুখে মাস্ক। হুইলচেয়ারে করে তাঁকে বার করে তোলা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। বেরোনোর সময়ে ‘কাকু’ কোনও কথা বলেননি। ইএসআই হাসপাতালেও অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বার করে হুইলচেয়ারে তোলা হয় ‘কাকু’কে।
বেশ কিছু দিন ধরেই ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চাইছিল ইডি। নিয়োগ মামলার তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টার পরেও ‘কাকু’র স্বরের নমুনা মেলেনি। এমনকি, আদালতের নির্দেশের পরেও সংগ্রহ করা যায়নি নমুনা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুজয়কে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি ছিল, ‘কাকু’কে আড়াল করছে এসএসকেএম। ইচ্ছা করেই তাঁর স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
বার বার এসএসকেএমে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ইডিকে। এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, ইএসআই হাসপাতালে ‘কাকু’কে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করা হোক। তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে কি না, তা-ও জোকা ইএসআইয়ের মেডিক্যাল টিম ঠিক করবে বলে জানিয়েছিল আদালত।
বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাই কোর্টে। বিচারপতি অমৃতা সিংহ রুদ্ধদ্বার শুনানি করেন। এই মামলায় মঙ্গলবারই বিচারপতি ইডির যুগ্ম ডিরেক্টর এবং ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দলের প্রধানকে তলব করেছিলেন। রুদ্ধদ্বার শুনানিতে তাঁরা ছিলেন। নিয়োগ মামলার যে রিপোর্ট ইডি আদালতে জমা দিয়েছে, সেখানে ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ এবং তার সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত রিপোর্টও ছিল। ওই সংস্থাতেই কাজ করতেন সুজয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy