Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Teacher Recruitment Scam Case

পার্থকে দফায় দফায় টাকা ‘দেন’ কুন্তল, সাক্ষী রেখেই করা হয়েছিল লেনদেন, দাবি ইডির

প্রাথমিক তদন্তের পরে ইডির দাবি, তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা সাক্ষী রেখে পার্থের কাছেই পৌঁছে দিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ।

সাক্ষী রেখে পার্থের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কুন্তল।

সাক্ষী রেখে পার্থের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কুন্তল। ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৮
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত টাকা পৌঁছে দেওয়া হত ‘তাঁর’ কাছেই। এবং তা দেওয়া হয়েছে দফায় দফায়। রীতিমতো সাক্ষী রেখে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ নিয়োগ চক্রের অন্যতম ‘চাঁই’ হিসেবে অভিযোগের তর্জনী উঠছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিকেই। প্রাথমিক তদন্তের পরে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি, তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা সাক্ষী রেখে পার্থের কাছেই পৌঁছে দিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ। কী রকম সাক্ষী? ইডি সূত্রের খবর, কুন্তল তাদের বলেছেন, পার্থকে দফায় দফায় টাকা দেওয়ার সময় গোপাল দলপতি নামে তাপস-ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে থাকতেন।

ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যেমন দফায় দফায় কুন্তলকে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা দিয়েছিলেন, কুন্তলের দাবি অনুযায়ী তিনিও সেই ভাবে দফায় দফায় টাকা দিয়েছিলেন পার্থকে। কুন্তল সেই সংক্রান্ত একটি খতিয়ানও তদন্তকারীদের সামনে পেশ করেছেন বলে ইডি সূত্রের খবর।

কুন্তলের বয়ান অনুযায়ী, কখনও পার্থের নাকতলার অফিসে, কখনও তাঁর আবাসনের কাছে একটি শপিং মলের রেস্তরাঁয় প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সচিবের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন তিনি। কুন্তলের আরও দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টি ফ্ল্যাট পাওয়া নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকার মধ্যে তাঁর দেওয়া সাড়ে ১৫ কোটি টাকা রয়েছে।

বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় গোপাল এখন তিহাড় জেলে আছেন। পার্থ আছেন প্রেসিডেন্সি জেলে। কুন্তলের এই বয়ান যাচাইয়ে পার্থ ও গোপালকে জেরা করা দরকার বলে মনে করছে ইডি। ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই দু’জন জেলে আছেন। তাই কৌশলে তাঁদের নাম উল্লেখ করে থাকতে পারেন কুন্তল। তদন্তকারীদের বিপথে চালিত বা বিভ্রান্ত করার জন্যও এমন বয়ান দিয়ে থাকতে পারেন তিনি।’’

তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেতা কুন্তলের ঘনিষ্ঠ শাসক দলের অন্য যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুধবার তলব করা হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতিতে শান্তনুও জড়িত বলে তথ্য পৌঁছেছে তাদের হাতে। শান্তনুর হুগলির বাড়িতে হানা দিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বহু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। এ দিন ডাকা হয়েছিল তাপসকেও। ইডি সূত্রের দাবি, কুন্তলের সামনে তাপস ও শান্তনুকে বসিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই প্রশ্ন পর্বের ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে।

ইডি-র দাবি, গোপাল যে তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাপস তা কবুল করেছেন। তাপস তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে কয়েক জন প্রার্থী ছিল গোপালের। তাঁদের কোনও ভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য গোপাল তাঁকে একাধিক বার অনুরোধ করেছিলেন। তাপস শেষে গোপালকে পাঠিয়ে দেন কুন্তলের কাছে। তাপসের বয়ান অনুযায়ী, তার পর থেকে তাঁর সঙ্গে গোপাল তেমন যোগাযোগ রাখতেন না, কুন্তলের সঙ্গেই থাকতেন।

তদন্তকারীদের দাবি, তাপসের কাছ থেকে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নেওয়ার পাশাপাশি গোপালের মাধ্যমে আরও সাড়ে ১০ কোটি টাকা তুলেছিলেন কুন্তল এবং সে-কথা তিনি জেরায় কবুলও করেছেন। পার্থের এক আপ্ত-সহায়ক ও সচিবের নামও তদন্তকারীদের জানিয়েছেন কুন্তল। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ওই দু’জনকে এর আগে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই ও ইডি। কুন্তলের বয়ানের ভিত্তিতে ফের তাঁদের তলব করা হতে পারে। ইডি-র দাবি, কুন্তলের বয়ানের ভিত্তিতে আদালতে আবেদন জানিয়ে জেরা করা হতে পারে পার্থ আর গোপালকেও।

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ২০১৬ থেকে নিউ টাউনের চিনার পার্কের দু’টি এবং ইএম বাইপাস সংলগ্ন বহুতলের তিনটি ফ্ল্যাট কার্যত কুন্তল ও শান্তনুর কার্যালয় ছিল। বাইপাসের ফ্ল্যাটের কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন শান্তনু।‌ তদন্তকারীদের কাছে তাপসের দাবি, তিনি ওই ফ্ল্যাটে শান্তনুর সঙ্গে একাধিক বার দেখা করেছেন। ‘কুন্তল সব চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে’ বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন শান্তনু। ইডি-র দাবি, সেই কারণেই দুর্নীতির শিকড় খুঁজতে বুধবার কুন্তল, তাপস ও শান্তনুকে মুখোমুখি বসিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে নানা তথ্য উঠে আসে। তা যাচাই করতে হয়। পুরো বিষয়টি এখন তদন্তসাপেক্ষ।’’ পার্থ ও কুন্তলের আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, ‘‘এটি বিচারাধীন বিষয়। আমি এখন কোনও মন্তব্য করব না। আমার যা বক্তব্য, শুনানির সময় আদালতকে জানাব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy