ফাইল চিত্র।
প্রথমে একশো বছরের জন্য লিজ় নেওয়া এবং পরে নিয়ম মেনে কেনা জমি নিয়ে যে ভাবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ‘তর্জন’ শুরু করেছেন, তাতে তাঁর দুঃখ প্রকাশের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে জানালেন অমর্ত্য সেন।
বুধবার অমর্ত্য বলেন, ‘‘প্রথমে জমি লিজ় নেওয়া হয়েছিল। তার কিছু দিনের মধ্যেই তা কেনাও হয়। সেই জমি নিয়ে বহু দশক বাদে যে ভাবে তর্জন করা হচ্ছে, তার জন্য (আমার) দুঃখ প্রকাশের যথেষ্ট কারণ আছে।’’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডেসিমেল জমি অমর্ত্যের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানায় ঢুকে গিয়েছে। সেই জমি দ্রুত ফিরিয়ে দিতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। এ দিন উপাসনার সময়েও বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যা বলেছেন, তাতে নাম না করে অমর্ত্যকে তিনি কটাক্ষ করেছেন বলে ধারণা অনেকের। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক থেকে রাজনৈতিক নেতারা। তাঁদের অনেকেরই মতে, এ ভাবে আদতে বাংলারই অপমান করা হচ্ছে।
জমি বিতর্কে আগেও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, যদি কোনও রকম নিশ্চয়তার দরকার হয়, তা হলে মাপজোক করে দেখা যেতে পারে। এ নিয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘জমি দখল’ সংক্রান্ত ‘মিথ্যা অভিযোগ’ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে বিশ্বভারতীকে আইনি চিঠি পাঠান অমর্ত্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময়ে অমর্ত্যের পাশে দাঁড়িয়ে গোটা রাজ্যের হয়ে ক্ষমা চান। কিন্তু মঙ্গলবারের চিঠিতে ফের একই কথা জানিয়েছে বিশ্বভারতী।
এ দিনই সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘(জমি) এই সংক্রান্ত নথিও সরকারের ঘরে জমা দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, এখান থেকে তাঁকে বার করে দিতে তাঁরা (বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ) হঠাৎ এত সক্রিয় কেন, তিনি তা বুঝতে পারছেন না। অমর্ত্য বলেছেন, ‘‘এর পিছনে কী রাজনীতি আছে, তা-ও বুঝতে পারছি না।’’
উপাচার্য এ দিন উপাসনাগৃহে বলেন, ‘‘আজকের দিনে এই মন্দিরের (উপাসনাগৃহের) কোনও প্রাসঙ্গিকতা আছে কি? তা যদি থাকত, তা হলে বিশ্বভারতীর আমরা সবাই নিজেকে রাবীন্দ্রিক বলি, অন্যায় করলেও রাবীন্দ্রিক, জমি যদি কব্জা করি, তাতেও রাবীন্দ্রিক। উপাচার্যকে গালিগালাজ করলেও রাবীন্দ্রিক।... কিন্তু রাবীন্দ্রিক হওয়ার জন্য যে উপায় বা পদ্ধতি গুরুদেব (রবীন্দ্রনাথ) তৈরি করে গিয়েছেন, যেমন (উপাসনা) মন্দিরে আসা, অনুষ্ঠানে যোগদান— কই সেগুলিতে তো আমরা থাকি না।’’
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অমর্ত্য বলেন, ‘‘উপাচার্য কী বলেছেন, তা আমি শুনতে চাই না।’’
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। তিনি বলেন, “ওঁকে (উপাচার্যকে) কিছু বলার নেই। এ ধরনের কথাই উনি বলে চলেছেন। এতে উনি যেমন বিশ্বভারতীকে ধ্বংস করছেন, তেমনই রবীন্দ্র ঐতিহ্যকেও নষ্ট করে চলেছেন।’’ আর এক আশ্রমিক সৌরীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার মতে এ ধরনের শব্দ মন্দিরে (উপাসনাগৃহে) বসে উচ্চারণ করা উচিত নয়।”
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য উপাচার্যের পাশেই দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘কেউ যদি সত্যিই জমি দখল করেন, তা হলে নোবেলজয়ী বলে তো তাঁর জন্য আলাদা আইন হতে পরে না। এর মধ্যে রাজনীতি নেই।’’ একই সঙ্গে তিনি ফের বলেন, ‘‘উনি দেখে যান, প্রতীচীর বাগানেও পদ্মফুল ফুটবে।’’
বিরোধীদের পাল্টা দাবি, এ ভাবে অমর্ত্যের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যেরও অপমান করা হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেনের মতো ব্যক্তিত্বের জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে, সেটা অন্যায়। বাংলার অপমান।’’ বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে আরএসএসের লোক বলে চিহ্নিত করে অধীর বলেন, ‘‘উনি এর বেশি আর কী বলবেন?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বোঝা যাচ্ছে মোদীর বাহিনী অমর্ত্যকে ভয় পায়। মোদীর ক্রীড়নক হয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য চলতে চান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy