ফাইল চিত্র।
রাজ্যে সাম্প্রতিক বন্যার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত দু’দিন ধরে তাদেরই দোষ দিয়ে চলেছেন। রাজ্য সরকারকে না-জানিয়ে তারা সমানে জল ছেড়েছে বলেও অভিযোগ। এই অবস্থায় জলাধার থেকে জল ছাড়ার নিয়মবিধি ও পদ্ধতি নিয়ে সংবাদপত্রে বিবৃতি প্রকাশ করল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। রাজ্য ও কেন্দ্রের কোন কোন প্রতিনিধিকে নিয়ে তৈরি কমিটি কী কী পদ্ধতি মেনে জলাধার থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, ওই বিবৃতিতে তা-ও জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর লাগাতার দোষারোপের প্রেক্ষিতে ডিভিসি-র এই বিজ্ঞপ্তিকে স্বাভাবিক ভাবেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিভিসি-র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দামোদর ভ্যালি রিজ়ার্ভার রেগুলেশন কমিটি’র নির্দেশ ও পরামর্শ অনুসারে বাঁধ ও জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় জল কমিশনের সদস্য (আর অ্যান্ড এম)। কমিটিতে ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার বা সমতুল পদমর্যাদার অফিসারেরাও আছেন। কত পরিমাণে জল ছাড়া হবে, তার উপরে ডিভিসি-র কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। জল ছাড়ার আগে রাজ্যের দামোদর উপত্যকার জেলাশাসক, দুর্গাপুরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার এবং এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে জানানো হয়। সেই সতর্কবার্তা হাওড়া ও হুগলির প্রশাসনের কাছে পাঠান দুর্গাপুরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই পদ্ধতি মেনে জল ছাড়া হলে রাজ্যের অজ্ঞাতে জল ছাড়ার অভিযোগ ধোপে টেকে না। ডিভিসি-র ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাঁধের জলধারণ ক্ষমতার উপরে ভিত্তি করেই জল ছাড়া হয়। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত জল জমিয়ে রাখলে বাঁধ ভেঙে বড় বিপদ ঘটতে পারে। বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পিছনে বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি সেচ দফতরের অফিসারেরাও স্বীকার করবেন।
ডিভিসি-র এই বিবৃতির পরে রাজ্যের সেচ দফতরের কর্তারা মুখ খুলতে চাইছেন না। সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “জল ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এর পরে আমাদের আর কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না।”
ডিভিসি-র সতর্কবার্তা যে পাওয়া গিয়েছিল, তা অবশ্য ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রশাসনের অনেকেই। তবে জল ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এই ধরনের সতর্কবার্তা পেলে বন্যা ঠেকানো আদৌ সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানোর খবর ডিভিসি থেকে আট-দশ ঘণ্টা আগে, বৃহস্পতিবার তাদের কাছে পৌঁছেছিল। তার মধ্যে যেটুকু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব, তা গ্রহণও করা হয়েছিল। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “সেচ দফতরের মাধ্যমে ডিভিসি বৃহস্পতিবার জল ছাড়ার ঘণ্টা তিনেক আগে বিষয়টি আমাদের জানায়। তার মধ্যে যতটা সতর্কতা নেওয়া সম্ভব, তা নেওয়া হয়েছিল।” পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, ডিভিসি সাধারণত জল ছাড়ার ‘অনেক আগে’ মোটেই জানায় না। এ বারেও জল ছাড়ার কথা অনেক আগে জানিয়েছিল, এমনটা নয়।
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক শ্রেণির আধিকারিক জানান, ডিভিসি-র জল ছাড়ার খবর যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলায় আসে, তখন প্রস্তুতি চালানোর মতো সময় তাঁদের হাতে বিশেষ থাকে না। ঝাড়খণ্ডে তুমুল বৃষ্টির খবর পেলেই ডিভিসি জল ছাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এটাই কয়েক বছর ধরে চলে আসছে।
এক প্রশাসনিক কর্তার বক্তব্য, নিয়মের খাতিরে হয়তো সতর্কবার্তা এসেছে। কিন্তু সতর্কবার্তা এবং জল ছাড়ার মধ্যে যেটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের মতে, এখন আবহাওয়া দফতর অনেক আগে পূর্বাভাস দেয়। তাই জল ছাড়তে হবে কি না, তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করা যেতে পারে। তাতে রাজ্য সরকার এবং জেলা প্রশাসনও পরিস্থিতি মোকাবিলার সময় পেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy