Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Murder

ছিল সম্পর্ক, সহবাসের পর শিল্পাকে খুন, স্বীকার রাজীবের

জেরায় রাজীব স্বীকার করেছেন, সেই রাতে তিনি আর শিল্পা মদ্যপান করেছিলেন। শারিরীক সম্পর্কও হয় দু’জনের মধ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:৪৫
Share: Save:

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের চরম জটিলতা এবং তার জেরেই খুন। দুর্গাপুরে শিল্পা অগ্রবাল হত্যাকাণ্ডের কিনারা সেই দিকেই ঢলতে চলেছে। পুলিশি জেরার মুখে ভেঙে পড়ে, শেষমেশ শিল্পাকে খুনের কথা স্বীকার করে নিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রাজীব কুমার।

দুর্গাপুরে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার মেজিয়া শাখার ম্যানেজার রাজীব পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁর ফ্ল্যাটেই ছিলেন শিল্পা। এবং সেই রাতেই শিল্পাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন তিনি। এর পর শিল্পার মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর মাথার পেছন দিকে ভারী ফ্রাইং প্যান জাতীয় জিনিস দিয়ে আঘাত করেন।

জেরায় রাজীব স্বীকার করেছেন, সেই রাতে তিনি আর শিল্পা মদ্যপান করেছিলেন। শারিরীক সম্পর্কও হয় দু’জনের মধ্যে। রাজীবের মোবাইলের মেসেজ থেকে পুলিশ জানতে পারে, বেশ কিছু দিন ধরেই শিল্পা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন রাজীবকে। সে দিনও সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছিলেন দু’জন। রাতে শিল্পা ঘুমিয়ে পড়ার পর তাঁকে খুন করেন রাজীব। খুনের পর দেহ সিলিংয়ে ঝোলানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও রাজীব স্বীকার করেছেন। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে দেন।

আরও পড়ুন: খুন করে ব্যাগে, গ্রেফতার দম্পতি

অদ্ভুত ভাবে, এই ঘটনাটি বছর আড়াই আগের আর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের যেন প্রায় পুনরাবৃত্তি। সেই দুর্গাপুর... সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার... বিবাহ বহির্ভূত প্রেম... বিয়ের চাপ... খুন... ট্রলি ব্যাগে দেহ... দেহ লোপাটের চেষ্টা... ২০১৫ সালের সেই ঘটনার সঙ্গে এর প্রচুর মিল। তবে সে বার সমরেশ সরকারের হাতে খুন হতে হয়েছিল দু¹জনকে। প্রেমিকা সুচেতা চক্রবর্তী এবং তাঁর চার বছরের মেয়ে দীপাঞ্জনাকে খুন করার পর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে, চারটে ট্রলি ব্যাগে ভরে শ্যাওড়াফুলি পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন সমরেশ, গঙ্গায় ফেলে দেবেন বলে। এ বারের ঘটনায় রাজীব কুমার অবশ্য, লাশ লোপাটের ইচ্ছে থাকলেও, বেশি দূর এগোতে পারেননি। কারণ তিনি জানতেন, বিল্ডিংয়ের সর্বত্র নজর রাখা সিসিটিভি ক্যামেরায় তাঁকে ধরা পড়ে যেতে হবে।

এই ব্যাগেই মিলেছিল শিল্পার দেহ। ইনসেটে, ধৃত দম্পতি। ছবি: বিকাশ মশান।

আরও পড়ুন: ছ’দিন পরে এল নিখোঁজ মেয়ের দেহ

এই ঘটনার সময় রাঁচীতে বাবা-মায়ের কাছে ছিলেন রাজীবের স্ত্রী মনীষা। রাঁচীতে দাদু-দিদিমার কাছেই থাকে তাঁদের চার বছরের ছেলে। মনীষা নিজেও স্টেট ব্যাঙ্কের ফুলঝোড় শাখার সহকারী-ম্যানেজার। প্রতি শুক্রবার তিনি রাঁচী চলে যান। সোমবার সেখান থেকে ফিরে, সরাসরি চলে যান অফিসে।

গত সোমবার মনীষা রাঁচী থেকে ফেরার পরই তাঁকে সব খুলে বলেন রাজীব। ঘটনা ধামাচাপা দিতে, এর পর শুরু হয় ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়। এবং এই পর্বে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, চাপে হোক বা দায়ে পড়ে, রাজীবের সঙ্গী হয়ে যান বা সব দেখে শুনেও নীরব থেকে যান মনীষা। শিল্পার দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরে ফেলা হয়। তার পর তা রেখে দেওয়া হয় বারো তলা ওই বাড়ির চার তলার করিডোরে, তাঁদের ফ্ল্যাটের উল্টোদিকে, লিফটের সামনের একটি ছোট ঘরে।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজীব-মনীষা টের পান, এই ট্রলি ব্যাগ থেকে দেহ পচনের দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করে দিয়েছে। এর পর মনীষা দুর্গাপুর থানায় ফোন করে বলেন, তাঁদের ফ্ল্যাটে একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তখন সকাল সাড়ে আটটা। আধ ঘণ্টার মধ্যে ওই আবাসনে পৌঁছে যায় পুলিশ। নীলচে বেগুনি রঙের নতুন ট্রলি ব্যাগে কালো প্লাস্টিক মোড়া অবস্থায় উদ্ধার হয় শিল্পার বিবস্ত্র দেহ।

বছর আঠাশের শিল্পা অগ্রবালের বাড়ি বাঁকুড়ার মেজিয়ায়। ‘ব্যাঙ্ক মিত্র’ হিসেবে তিনি কাজ করতেন রাজীবের শাখাতেই। শুক্রবার তিনি আসানসোলে মাসির বাড়ি যান। শনিবার সন্ধে সাতটা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরছেন বলে জানান। সেটাই শিল্পার সঙ্গে বাড়ির শেষ যোগাযোগ। এর পর তাঁর মোবাইল সুইচড অফ হয়ে যায়। মঙ্গলবার মেজিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে শিল্পার পরিবার।

শিল্পার পরিবারের দাবি, রাজীব কুমার শেয়ার বাজারে খাটানোর নাম করে শিল্পার থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা অনেক দিন ধরে ফেরত চেয়েও পাওয়া যায়নি। সেই গোলমালের জেরেই শিল্পাকে খুন হতে হল বলে মনে করছেন শিল্পার ভাই টিঙ্কু অগ্রবাল। যদিও এই দাবি নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দিগ্ধ ছিলেন তদন্তকারীরা। কারণ, রাজীব এবং তাঁর স্ত্রী দু’জনেই ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্মী। লাখখানেক টাকার জন্য তিনি এমন খুন করবেন বলে মনে হচ্ছিল না পুলিশের।

অন্য দিকে বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পার দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই আটক করা হয়েছিল রাজীব আর মনীষাকে। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। শিল্পা আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রথমে দাবি করেন রাজীব। পুলিশকে তিনি জানিয়েছিলেন, শনিবার রাতে শিল্পা তাঁর ফ্ল্যাটেই ছিলেন। বলেন, রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি শিল্পার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। কিন্তু প্রথম থেকেই রাজীবের নানান বয়েনের মধ্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ছিল পুলিশের কাছে।

শেষ পর্যন্ত লাগাতার পুলিশি জেরার মুখে পড়ে নিজের অপরাধের কথা কবুল করেছেন রাজীব। রাজীব আর মনীষাকে আজ দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছিল। আদালত দু’জনকেই ১০ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। জেরায় আরও অনেক তথ্য উঠে আসবে বলে মনে করছে পুলিশ।

এ দিকে রানিগঞ্জের গির্জাপাড়ায় রাজীবের আরও একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে শিল্পার জামাকাপড় এবং একটি মোবাইল ফোন। জন্ম নিরোধক এবং যৌন উত্তেজক ওষুধও সেখানে মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy