নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবকে ‘কাজে লাগাতে’ গিয়ে বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামের মালা গাঁথলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তালিকায় শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ থেকে উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন— সকলেই স্থান পেয়েছেন। অনিবার্য ভাবে এসেছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তবে বিধান রায়, জ্যোতি বসুর মতো কোনও রাজনীতিককে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেননি।
বিরোধীদের অনেকের মতে, মোদী ভোটের রাজনীতি করতে বাঙালির নামাবলি পাঠ করলেন, আবার রাজনীতির কারণেই অন্য দলের জাতীয় স্তরে পরিচিত বিশিষ্ট বাঙালি নেতাদের নাম সচেতন ভাবে এড়িয়ে গেলেন। এতেই পরিষ্কার— তাঁর এই বঙ্গ-প্রীতি আসলে ভোট আদায়ের মরিয়া চেষ্টা।
ইজেডসিসি-তে আয়োজিত বিজেপির দুর্গাপুজো বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করে শারদোৎসব উপলক্ষে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণের শুরুতে এবং শেষে কয়েকটি কথা তিনি বাংলায় বলেন এবং উচ্চারণে ত্রুটির জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন। এরই সঙ্গে এ দিন প্রধানমন্ত্রী ধর্ম থেকে শুরু করে নবজাগরণ আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প, সঙ্গীত— এই সব ক্ষেত্রে অবদান রাখা প্রায় ৪০ জন বাঙালি ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করেছেন। মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা-সহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই বঙ্গ বিজেপির পরিসরে বক্তৃতা করলে বাঙালির স্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের নাম উচ্চারণ করেন। কিন্তু এ দিন মোদীর ভাষণে সেই উচ্চারণ ছিল পরিকল্পিত ভাবেই অনেক বেশি ক্ষেত্রে ব্যাপ্ত।
যেমন মোদী এ দিন বলেন, ‘‘বাংলার মাটি নিজের মাথায় লাগিয়ে পুরো মানবতাকে দিশা দেখিয়েছেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রী অরবিন্দ ঘোষ, লোকনাথ বাবা, ঠাকুর শ্রী অনুকূলচন্দ্র, মা আনন্দময়ী। তাঁদের এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সাদর প্রণাম জানাই।’’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গেই মোদী স্মরণ করেন গুরুচাঁদ ঠাকুর, হরিচাঁদ ঠাকুর এবং পঞ্চানন বর্মাকে। তাঁর ভাষণে এসেছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, মাস্টারদা সূর্য সেন, বাঘা যতীনের নামও। আবার বাঙালি বিশিষ্ট নারীর তালিকা মোদী শুরু করেছেন সারদা দেবীকে দিয়ে।
আরও পড়ুন: উপসর্গহীনেরাই ‘সুপার স্প্রেডার’, সমীক্ষায় দাবি
আরও পড়ুন: ‘তা হলে কে মারল আমার ছেলেকে?’
তার পর সেখানে স্থান পেয়েছেন মাতঙ্গিনী হাজরা, রানি রাসমণি, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সরলা দেবী চৌধুরাণী, কামিনী রায়। বিজ্ঞানীদের মধ্যে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের নাম এ দিন নিয়েছেন মোদী। শিল্প এবং সঙ্গীত জগতের সূত্রে কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, সুচিত্রা সেন, উত্তমকুমারের নাম এসেছে মোদীর মুখে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ভারতমাতার ছবির প্রসঙ্গও টেনেছেন তিনি।
বিরোধী তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম— তিন দলই মনে করছে, এ রাজ্যের আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে শারদোৎসবের ষষ্ঠীর সকালে প্রাণপণে বিশিষ্ট বাঙালিদের নাম আউড়ে গিয়েছেন মোদী। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে শুনে আমার ভাল লাগছে। তবে তিনি এই নামগুলি মুখস্থ করেছেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক লাভের আশায়। তাই ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েও বাংলার মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ২০২১ সালের ভোটের আগে। তবে তাতে কোনও লাভ হবে না। সত্যিই বাংলার প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিলেন না কেন? আগে তা দিয়ে দেখান।’’
পাশাপাশি, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘শারদোৎসবের আঙিনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশে কালিমালিপ্ত করে প্রধানমন্ত্রী বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে প্রকারান্তরে অপমান করলেন।’’
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিজেপি জানে তারা বাঙালি এবং বাংলা বিরোধী। তাই জোর করে নিজেদের বাংলা দরদ প্রমাণ করতে তাদের প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে বিশিষ্ট বাঙালিদের নামের তালিকা বলাতে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy