স্বাস্থ্যবিধি উড়িয়ে ভিড় দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে। বৃহস্পতিবার তপসিয়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ
কর্মসূচির বয়স সবে চার দিন। তাতেই দেখা যাচ্ছে, দুয়ারে প্রশাসনের সরকারি শিবিরে উপভোক্তাদের হাজিরার নিরিখে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সব চেয়ে কম উপস্থিতি কালিম্পংয়ের শিবিরে। ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৮,৩৬,২৮২ জন শিবিরে যোগাযোগ করেছেন। শুধু এ দিনই শিবিরে যান ২,৯৪,৫২৭ জন। চাহিদার নিরিখে এগিয়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ঋণ চেয়ে জমা পড়া আবেদনপত্রের সংখ্যা সব চেয়ে কম।
সারা রাজ্যে আপাতত ২২,৫১৫টি শিবির চলছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ৩৫ ধরনের পরিষেবা চেয়ে শিবিরে আর্জি জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গত তিন দিনে শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই ১,২৭,৭৭৭ জন কোনও না-কোনও পরিষেবা চেয়ে শিবিরে আসেন। তার পরেই রয়েছে বাঁকুড়া। সেখানে এ-পর্যন্ত হাজিরার সংখ্যা ৭৬,১৩১। ৭৫ হাজার মানুষ যোগাযোগ করেছেন উত্তর ২৪ পরগনায়। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের শিবিরগুলিতে হাজিরা ৭২ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে। পূর্ব বর্ধমানে অন্তত ৫০ হাজার, হাওড়ায় অন্তত ৪৩ হাজার, হুগলিতে ৩২ হাজার, পুরুলিয়ায় ৩০ হাজার এবং বীরভূমে ২৮ হাজার মানুষ পরিষেবা চেয়েছেন ওই সব শিবিরে। ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার মানুষ পরিষেবা চেয়ে আবেদন করেছেন উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, কোচবিহার, পশ্চিম বর্ধমান ও জলপাইগুড়িতে। কলকাতায় সংখ্যাটা ১৩,৬০০। ১০ হাজারের কম হাজিরা আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কালিম্পং, দক্ষিণ দিনাজপুর ও ঝাড়গ্রামে।
পরিষেবাগত চাহিদার শীর্ষে রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী। এই প্রকল্পে এ দিন পর্যন্ত ৫,৯৭,৭৭৭টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় এর চাহিদা সর্বাধিক। খাদ্যসাথী প্রকল্পের পরিষেবা চেয়ে আবেদনের সংখ্যা ৯৪,৬৪৩। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ৭৬ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। জাতি শংসাপত্রের আবেদন ৩৫,৪৪৮টি। বার্ধক্য ভাতার জন্য ৩১ হাজার, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ২৬ হাজার, বাংলা আবাস যোজনায় প্রায় ১১ হাজার আবেদন এসেছে। সামাজিক পেনশন, বৃত্তি, রেশন, জমি, কৃষিঋণ, বিধবা ভাতা সংক্রান্ত আবেদনপত্রের সংখ্যা ১০ হাজারের মধ্যে রয়েছে। কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আবেদনপত্রের সংখ্যা ৯০৯। শৌচালয়, পুলিশ, রাস্তা নিয়েও বিভিন্ন ধরনের আবেদন আসছে।
জাতি শংসাপত্র যাঁদের ছিল না, প্রাপ্তি-পদ্ধতি সরলীকরণের ফলে তাঁরাও এখন আবেদন করছেন। নাম লেখালেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পভুক্ত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সরকার। নথি যাচাইয়ে লাল ফিতের ফাঁস না-থাকায় এই প্রকল্পে আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। আবার জুন পর্যন্ত নিখরচায় রেশন মিলবে বলে ঘোষণা করার পরে রেশন কার্ডের সমস্যা দ্রুত মেটাতে চাইছেন উপভোক্তারা। রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করার আবেদনও আসছে। “যে-সব প্রকল্পের পরিধি বেড়েছে, সেগুলিতেই আবেদনের সংখ্যা বেশি। বহু চালু প্রকল্পে বেশির ভাগ মানুষ আগেই পরিষেবার আওতায় আসায় সেগুলিতে আবেদনের সংখ্যা কম। সরকারি ঘোষণা এবং সুবিধাদানের মধ্যে ব্যবধান দূর করতেই এই ব্যবস্থা,” বলেন প্রশাসনের এক কর্তা।
অতিরিক্ত ভিড় ও বিক্ষোভের দরুন এ দিন বারাসতে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি ভেস্তে যায়। বারাসতের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড, নিবেদিতা পল্লিতে পাশাপাশি চারটি ওয়ার্ডকে নিয়ে শিবির করা হয়েছিল। সকাল থেকেই সেখানে ভিড় জমতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসেন কয়েক হাজার মানুষ। দুপুরে লাইন দীর্ঘতর হয়। অধিকাংশ মানুষই এসেছিলেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাতে। ভিড়ের চাপে শিকেয় ওঠে দূরত্ব-বিধি। এরই মধ্যে শুরু হয় বিক্ষোভ। অভিযোগ, বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরাই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। চারটি ওয়ার্ডের ২৫ হাজার মানুষের জন্য একটি শিবির কেন, প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভকারীরা। এমনিতেই ভিড় সামলাতে নাজেহাল হতে হচ্ছিল পুলিশ এবং সরকারি কর্মীদের। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ শুরু হতে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত শিবিরটি বন্ধ করে দিতে হয়। বারাসত পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় জানান, আরও ছোট এলাকায়, প্রয়োজনে বাড়িতে বাড়িতে এই কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy