প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে হাতজোড় করে আবেদন করছেন মহিলারা। — নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ কি তবে রয়েছে পুলিশেই? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বারাসতের সভার আগের রাতে সন্দেশখালিতে যে ভাবে তাদের তৎপরতা বেড়ে গিয়েছিল এবং বুধবার সেই সভায় যাওয়ার পথে বার বার যে ভাবে বাধা দেওয়া হয় ওই এলাকার মহিলাদের, তাতে এই প্রশ্নই আবার উঠতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিন ধরে সন্দেশখালি এলাকায় নিগৃহীতাদের প্রতি সুবিচারের যে বার্তা জেলা পুলিশের উচ্চমহল থেকে দেওয়া হচ্ছিল, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
পুলিশের অবশ্য দাবি, এটা রুটিন তদন্ত। সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, “বিরোধীরা সব কিছুতেই পুলিশ প্রশাসনের কাজে ভুল খুঁজে বেড়াচ্ছে। সব কিছুতেই রাজনীতি করছে।”
মঙ্গলবার রাতেই কিছু ভিডিয়ো ভাইরাল হয় (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার), যেখানে দেখা যায়; গ্রামের মহিলারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হাতজোড় করে বলছেন, তাঁরা সভায় যেতে চান। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করছে। ভিডিয়োয় এক মহিলা দাবি করেন, “বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে একটা মামলার নোটিস নিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা। কিসের মামলা, জানি না। বলা হয়, বুধবার সকাল ১০টায় সন্দেশখালি থানায় হাজির হতে হবে।” মহিলার দাবি, “এটা আসলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করতে দেওয়ার চেষ্টা।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্দেশখালির দাস পাড়ায় এক মহিলার বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে সাদা পোশাকে আসে পুলিশ। কয়েক জন মহিলা পুলিশকর্মীও ছিলেন। ওই মহিলাকে ইংরেজিতে লেখা একটি কাগজে সই করতে বলা হয়। তিনি প্রথমে সই করতে চাননি। পুলিশ বুঝিয়ে সই করায় বলে দাবি। ক্রমশ আশপাশের মহিলারা জড়ো হতে শুরু করলে পুলিশ চলে যায়। এর পরেই মহিলারা সকলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ভিডিয়োটি তৈরি করেন।
বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, “একটি মামলার তদন্তে নিয়ম মেনে থানায় ডেকে পাঠানোর নোটিস দিতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসার। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। উনি আজ থানায় আসেননি। আগামী দিনে নিশ্চয়ই আসবেন।”
গত কয়েক দিনে নানা ভাবে মানুষের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগী পুলিশ। এই অভিযোগে সেই সদিচ্ছা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে। বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুকল্যাণ বৈদ্য বলেন, “পুলিশ চেয়েছিল, মহিলারা যাতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় পৌঁছতে না পারেন।” সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দার বলেন, “থানার পাশের পাড়ায় নোটিস দিতে রাতে যেতে হল কেন? এ ভাবে মানুষের আস্থা ফিরবে কী করে?”
এ দিন সকালে অবশ্য পরিকল্পনামাফিক ধামাখালি থেকে বাসে চেপে বেশ কয়েক জন মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সভার উদ্দেশে রওনা দেন। অভিযোগ, তাঁদের অনেককে সভায় ঢোকার আগে বাধা দেওয়া হয়। নিউটাউনে বিশ্ব বাংলা গেটের সামনে বাস আটকানো হয় বলে দাবি। তবে বিজেপি প্রতিবাদে বিশ্ব বাংলা সরণি অবরোধ করলে পুলিশ আবার বাস ছেড়েও দেয়। এ সবের জেরে কেউ কেউ মোদীর সভায় পৌঁছতে পারেননি, কেউ আবার দেরিতে পৌঁছন। এক মহিলার বক্তব্য, ‘“আমরা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁর দলের লোকেরা অত্যাচার করেছে, পুলিশ কোনও কথা শোনেনি। একটা সভায় যাচ্ছি, তাতেও বাধা দিচ্ছে। এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই!”
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এবং বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের মন্তব্য, “প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করতে চায়নি। এখন মহিলাদের মোদীজি’র সভায় আসতে বাধা দিচ্ছে। তাঁদের কোনও গণতান্ত্রিক অধিকার নেই?” বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সভায় আসার পথে মহিলাদের ব্যাগ তল্লাশি করেছে, ভিডিয়ো রেকর্ডিং করেছে, কোথাও কোথাও আটকেছে। এটা কোথায় বাস করছি?’’ তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বাধার বিষয় নেই। বিজেপি ওই এলাকার কোনও নির্যাতিতাকে নিয়ে যেতে পারেনি। বদলে নিজের দলের কিছু মহিলাকে সাজিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। সেই সব ঢাকতে নাটক করেছে।’’
পুলিশের দাবি, সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রী কাছারি মাঠে পৌঁছেছেন। তাই শহরের রাস্তাগুলি সাময়িক বন্ধ রাখা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে। একই কারণে সভাস্থলে ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই ব্যাগ থাকা অনেককেই ফেরাতে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy